২০ হাজার পশু বহন করেও কখনো কোরবানি দিতে পারেননি আফজাল
‘গত ১০ বছর যাবত গরু বহন করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কোরবানির মৌসুম এলে গরু বহনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। জীবনে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বহন করে মালিকদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। বিনিময়ে সন্তোষজনক পারিশ্রমিক পেলেও মনের কোণে চাপা কষ্ট রয়ে গেছে। সারা জীবন মানুষের কোরবানির গরু বহন করলেও অভাব-অনটনে ব্যক্তিগতভাবে নিজে কখনও কোরবানি দেওয়ার সুযোগ হয়নি।’
আক্ষেপ আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন আলতাফ হোসেন। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন। নিজের ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে কোরবানির পশু ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে আলতাফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর কোরবানির মৌসুম এলে গরু বহনের চাপ অনেক বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোরবানির মৌসুমটা গরু বহনকারীদের জন্য আয়ের উপযুক্ত সময়। জীবনে ২০ হাজারেরও বেশি কোরবানির পশু বহন করলেও নিজে কখনও কোরবানি দিতে পারিনি। তবে আল্লাহ সহায় থাকলে জীবনে একটি গরু কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা আছে।
শুধু আলতাফ হোসেন নয়, এমন অনেক অসহায় ও নিম্নবিত্ত মানুষ রয়েছেন যারা কোরবানির গরু ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেন। এমনই আরেকজন হলেন ইমরুল হোসেন।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে ইমরুল হোসেন বলেন, কোরবানির মৌসুমে পশু বহনের কাজ করে থাকি। ক্রেতাদের পছন্দের পশু তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া আমার কাজ। জীবনে অনেক ক্রেতার পছন্দের পশু বাড়িতে পৌঁছে দিলেও কখনও নিজের গাড়িতে করে নিজের বাড়িতে কোরবানির পশু বহন করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে আল্লাহ কবুল করলে একটি গরু কোরবানি করবো।
সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের সমাজে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির অনেক মানুষ রয়েছেন যারা কোরবানির অংশীদার হতে পারেন না। এমনকি বছরে দুয়েকবার গরুর মাংস কেনার সাধ্যও হয় না তাদের। কেননা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনে খাওয়াটা তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। তাই কোরবানির সময় আশা করে থাকেন সমাজের বৃত্তবানরা তাদেরকে মাংস উপহার দেবে। সমাজে যারা বিত্তবান রয়েছে তাদের উচিত এ সমস্ত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া।
এদিকে, পশুর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় পছন্দের পশু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সুমন হোসেন নামে সাতক্ষীরা শহরের লাবসা এলাকার এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসে অনেক গরু দেখা হয়েছে। তবে গরুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। দরদাম করেও কোনোভাবে সাধ্যের মধ্যে গরু কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
মফিজুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা ঢাকা পোস্টকে জানান, গত চার বছর যাবত একটি গরু তিনি লালনপালন করেছেন। এবার কোরবানির বাজারে সেটার মূল্য নির্ধারণ করেছেন পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা ভালো দাম না বলায় তিনি এখনও গরুটি বিক্রি করতে পারছেন না। সাড়ে চার লাখের কাছাকাছি দাম উঠলে গরুটি বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সংগতিপূর্ণ কারণে গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান এই বিক্রেতা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ ঢাকা পোস্টকে জানান, সাতক্ষীরায় এ বছর ৯ হাজার ৯২৬টি খামারে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৮টি পশু বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত থাকলেও চাহিদা রয়েছে ৮০ হাজার ৪৩৮টি। অর্থাৎ ৩৪ হাজার ৫৬০টি পশু অতিরিক্ত থেকে যাবে। এসব পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। একইসঙ্গে প্রতারক চক্র যেন কোনোভাবে জাল টাকার বিস্তার করতে না পারে তা রোধে পশুর হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তের মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কোথাও কোনো প্রকার অসংগতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে অবহিত করলে ব্যবস্থা গ্রহণ নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।
সোহাগ হোসেন/এমজেইউ