কামারপাড়ায় নেই সেই টুংটাং আওয়াজ-কর্মব্যস্ততা
সাধারণত সারাবছরে কাজের তেমন চাপ না থাকলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কামারপাড়া জমজমাট হয়ে ওঠার কথা থাকলেও পিরোজপুরের পরিস্থিতি ভিন্ন। যেখানে কামারদের গ্রাহকের দা, ছুরি, বটি মেরামতে বা নতুন নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে ওঠার কথা ছিল। সেখানে ক্রেতা বলে অলস সময় পার করছেন কামারপাড়ার কামাররা। নেই তেমন হাতুরির আঘাত আর ঝনঝন শব্দে মুখরিত পরিবেশ। কাজ না থাকায় অভাবে কোনোরকম জীবন কাটছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের।
বলছিলাম পিরোজপুর সদর উপজেলার রাজারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার কথা। যেখানে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েক শতাধিক কামার শিল্পী।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, কামাররা প্রাচীনকাল থেকেই লোহা থেকে দৈনন্দিন তৈজসপত্র তৈরি করেন। যা মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন উৎসবেও কাজে লাগে। প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু সমাজের শূদ্র সম্প্রদায় এ পেশার সঙ্গে বেশি জড়িত ভহিল। বর্তমানে মুসলিমদের কিছু অংশ নিজেদের এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। আগে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি কৃষি-যন্ত্রপাতিও কামারদের দ্বারা তৈরি হতো তবে বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীতা নেই বললেই চলে।
পিরোজপুর জেলায় এই কামার পেশার সঙ্গে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ জড়িত। যাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য এই কর্মক্ষেত্রই একমাত্র অবলম্বন। তাদের প্রতি দ্রুত সুদৃষ্টি না দিলে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকই। ফলে হারিয়ে যেতে পারে এই কামার শিল্প। স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামটাও একটু বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম কিছুটা কম হয়। এছাড়া কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় এ্যাঙ্গেল, রড, স্টিং, রেললাইনের লোহা গাড়ির পাত ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
কামার মিঠুন কর্মকার বলেন, দা, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কুরবানি উপলক্ষ্যে আমরা তৈরি করে রেখেছি। লোহার দাম বেড়েছে কিন্তু আমরা আমাদের তৈরিকৃত পণ্যের দাম তেমন বাড়াইনি। বাজারে আমাদের পণ্যের দাম স্বাভাবিক রেখেছি এখন পর্যন্ত। দোকানে ক্রেতাদের চাপ নেই বললেই চলে। তবে আশা করছি কোরবানি কাছে আসলেই ক্রেতাদের চাপ বাড়বে।
আরেক কর্মকার ক্ষিতিষ চন্দ্র দাস বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে আশা করছি আমাদের ভালো বেচাকেনা হবে। আমরা কিছু সরঞ্জাম অগ্রিম তৈরি করে রেখেছি। যাতে ক্রেতাদের কিনতে এসে অসুবিধায় পড়তে না হয়।
কর্মকার স্বপন দাস বলেন, এখন বিক্রি নেই বললেই চলে। আশা করছি সামনে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। কতদূর কি হবে এখন পর্যন্ত বলা যায় না। দুই একজন ক্রেতা দিনে আসেন। টুকিটাকি কেনাকাটা করেন। বিক্রি ভালো হলে দুই পয়সা আয় করে আমাদের দিনগুলো ভালো কাটবে। না হলে তো সমস্যায় পড়তে হবে।
কর্মকারী নিলু দাস বলেন, ধারকর্য করে কুরবানি উপলক্ষ্যে দোকানে মালামাল তুলেছি। এখানে ২০০/৩০০ টাকা বিক্রি হয় প্রতিদিন। এতে তো কয়লার খরচও ওঠে না। কয়লার দাম অতিরিক্ত আর বিদ্যুৎ সমস্যা তো আছেই। এজন্য আজেবাজে কাঠ দিয়ে কাজ করতে হয়। কাঠ কয়লা কিনে কোনোভাবে দিন চলে যাচ্ছে।
বাবু চন্দ্র দাস বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা একটু খারাপ। এ বছর এখন পর্যন্ত ভালো বিক্রি হয়নি বললেই চলে। দেখা যাক কোরবানি আসতে আসতে যদি ভালো বিক্রি হয় তাহলে ভালো। লাভের আশা এবছর খুবই কম। কয়লা ও লোহার দাম বাড়তি থাকায় আমাদের খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব জানান, পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরের কামার শিল্পীরা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে রেখেছে। আশা করছি ভালো বিক্রি হবে। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেভাবে অনলাইনে বিক্রি হয় তাতে মনে হয় না তারা আগের মতো বিক্রি করতে পারবে।
আবীর হাসান/আরকে