কেউ নাচছে গানের তালে তালে। কেউবা আবার গান গাইছে নিজের সুরে। অনেকেই দৌড়ে বেড়াচ্ছে মাঠজুড়ে। বাবা-মাহীন এইসব এতিম শিশুদের আনন্দ ও কোলাহলে ঈদের দিন সকাল থেকেই মুখর হয়ে উঠেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি।

অন্যসব শিশুদের মতোই ঈদের দিনটি খুশির বার্তা নিয়ে এসেছে এসব এতিম শিশুদের মধ্যে। যাদের চার দেয়ালের মধ্যে কাটে বছরের পুরোটি সময় সেইসব বাবা-মাহীন শিশুদের নিষ্পাপ মুখ বাধভাঙা উল্লাসে রঙিন হয়ে ওঠে ঈদের এই দিনটি। 

জানা গেছে, কারো বাবা নেই, কারো মা নেই কেন্দ্রটিতে এমন প্রায় ৩শ শিশু রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শিশুদের গোসল করিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয় নানা রঙের বাহারি পোশাক। এরপর বাঙালির চিরায়ত নিয়ম মেনে দেওয়া হয় সেমাই ও খিচুড়ি। এরপর শিশুরা যোগ দেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। যে যেমন খুশি অংশ নেয় অনুষ্ঠানে আবার কেউ বা শুধু উপভোগ করায় ব্যস্ত ছিল। এরপর দুপুরে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয় শিশুদের মাঝে। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, গরুর মাংস, ডাল, সালাদ, দই, মিষ্টি ও সেভেনআপ। ঈদের আনন্দ যেন বাবা-মায়ের কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে এই এতিম শিশুদের।

২০০১ সালে এতিম ও দুস্থ শিশুদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে ৩০০ মেয়ে শিশু রয়েছে। 

শিশু পরিবারের সাদিয়া নামে এক শিশুর সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, ঈদে আমরা এখানে খুবই আনন্দ করি। ইচ্ছেমত নাচ গান করি। সকাল ও দুপুরে আমাদের জন্য স্পেশাল খাবার খেয়েছি। ঈদের আনন্দ আমাদের মা-বাবার কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। 

মারিয়া নামে এক শিশুর সাথে কথা হলে সে বলেন, ঈদের দিনটা আমাদের অনেক আনন্দ হয়। অন্যরা যেমন পরিবারের সাথে ঈদ করে আনন্দ পায় আমরাও এখানে তেমন আনন্দ করি। এছাড়া কখনো যদি আমাদের মা বাবার জন্য  কষ্ট হয় তখন শিক্ষক কে আমরা মা বলে ডাকি। 

এ বিষয়ে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তত্বাবধায়ক শিলা সাহা বলেন, আমি এখানে আসার পর ঈদে আর ছুটি নেইনি। শিশুদের সঙ্গে প্রতিটি ঈদ করি। ওদের আনন্দই আমার আনন্দ। এখানকার ৩শ শিশুর মা আমি। 

তিনি আরও বলেন, আজ ঈদের দিন সকালে ওরা ঘুম থেকে ওঠার পর গোসল শেষে নতুন পোশাক পড়েছে। এরপর সেমাই ও খিচুড়ি খেয়েছে। এরপর তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যে যার মতো আনন্দ করেছে। 

আশিক জামান/আরকে