বিশাল আকৃতির গরু “মানিককে” এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রি করতে না পেরে চরম হতাশ উদ্যোক্তা হামিদা খাতুন। দেশীয় খাবার খাইয়ে পরম যত্নে লালন-পালন করে মানিককে বড় করে তুললেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারেননি তিনি। 

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের মেয়ে হামিদা আক্তাররা তিন বোন। ভাই না থাকায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকেই। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়িতেই একটি মুদি দোকান করেছেন। সেখানে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ ও দর্জির কাজও করে সে। নিজ উপার্জনের বড় অংশই ব্যয় করেছেন মানিকের পেছনে। হামিদা টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স করেছেন।

হামিদা খাতুন টাঙ্গাইলের সব চেয়ে বড় গরু বিক্রির জন্য জেলা বা উপজেলা প্রাণীসম্পদের পক্ষ্য থেকে কোনো সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেছে।

তিনি বলেন, লোকবল সংকটসহ নানা অসুবিধার কারণে এবার মানিককে ঢাকার হাটে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাড়ি থেকে গরুটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যে দুই একজন ক্রেতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন দেখে যোগাযোগ করেছেন তারা পোল্ট্রি দামে গরুর মাংস কিনে চান। নামমাত্র কেজি দরে গরু কিনতে চেয়েছিল অনেকেই।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দীন সারোয়ার রিজভী বলেন, তার ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি বিক্রির জন্য সবার্ত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। গরুটি কিনতে অনেকেই হামিদাকে ফোন করেছিল। এছাড়া দামও করেছিল কিন্তু সে গরুটি বিক্রি করেনি। তিনি গরুটির ওজন ৫২ মণ বললেও বাস্তবে ওজন এতো হবে না। ৩৫ মণ ওজন হবে হয়ত গরুটির। প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় তার বাড়ি। তারপরও নিয়মিত তার খামারে গিয়ে খোজ খবর নেয়া হয়েছে।

হামিদ খাতুন বলেন, তার গরুটি ৫২ মণ ওজনের। ঈদের আগে মুন্সিগঞ্জের একজন ফোনে গরুটির দরদাম করেন। সর্বশেষ ১৩ লাখ টাকায় গরুটি দাম করা হয়। তবে ঈদের আগে ৩ লাখ টাকা দিয়ে ঈদের পরে ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন ওই ক্রেতা। কিন্তু বাকিতে হামিদা গরুটি বিক্রি করতে রাজি হয়নি। এছাড়া কয়েকজন দাম দর করেছিলেন। সর্বশেষ সাড়ে ৮ লাখ টাকা দাম করেছিলেন একজন কিন্তু পরে আর আসেনি।

হামিদা বলেন, একজন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কথা বলে যোগাযোগ করেছিলেন একজন ক্রেতা। সে ৩০০ টাকা কেজি দর হিসেবে দাম করেছিল। কিন্তু এতো কম দামে বিক্রি করব না। এছাড়া ঈদের পরেও কয়েকজন ফোন করেছিল। স্কেল ওজনের মাধ্যমে কেউ ১৫০ টাকা কেউ ২০০ টাকা কেজি দাম করেছিল।

তিনি আরও বলেন, এ বছর মানিককে লালন-পালন করব। আমার খামারে আরও চারটি গরু রয়েছে। গরু হাটে নিতে ৫-৬ জন মানুষের প্রয়োজন হয়। কিন্তু লোকজনের অভাবে এবং হাটের পরিবেশের কারণে নেওয়া হয়নি।

দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দীন সারোয়ার রিজভী বলেন, কয়েক সপ্তাহ পর হামিদার গরুটি যদি কেজি দরে বিক্রি করতে চান তাহলে যেকোনো কোম্পানির কাছে বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রত্যান্ত অঞ্চলে গরু এতো বড় করা ঠিক হয়নি। এতো বড় গরু তার বাড়ি থেকে বের করাও কঠিন হবে। এছাড়া এবার ঈদে তেমন গরু বিক্রি হয়নি।

অভিজিৎ ঘোষ/আরকে