আমি আমার বাকির খাতাটা উদ্ধার করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম
কালকে যখন আগুন লাগে তখন বাসায় ছিলাম। ফোনে জানতে পারলাম আমার দোকানে আগুন লাগছে। ছুটে এসে দেখি সব পুড়ে শেষ। আমার দোকানে স্টেশনারি ও বিভিন্ন কসমেটিকস সামগ্রী ছিল। সব পুড়ে গেছে। ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকার মাল ছিল সব পুড়ে গেছে। আমি এখন কী করব। আমার দোকানে দুইটা ছেলে থাকে। এই দোকান থেকে তাদের সংসার চলে, আমারও সংসার চলে। এখন আমরা তিনজনই বেকার হয়ে গেলাম।
চোখে পানি নিয়ে এভাবে বলছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা পৌর বাজারের আইফুল স্টোরে স্বত্ত্বাধিকারী হাইফুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
গতকাল শনিবার (৮জুলাই) রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তার দোকানসহ তিনটি মনিহারি দোকান পুড়ে ছাই ও একটি হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরেে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে।
তিনি আরও বলেন, আমার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন তো কিছু করার নেই। সরকার যদি কিছু করে আমাদের জন্য তাহলে কিছু করে খেতে পারব। তাছাড়া আমার করার কিছু নাই।
বিজ্ঞাপন
স্নেহা স্টোরের মালিকের ছেলে আমজাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এসে দেখি দোকানপাট সবগুলোতে আগুন জ্বলছে। আমি আমার বাকির খাতাটা উদ্ধার করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছি। পরে আর কিছু বলতে পারি না। আমার দোকানে প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো মালামাল পুড়ে গেছে। আমরা এখানে পাইকারি মালামাল বিক্রি করি খচরা বিক্রি করি না। এই থানার মধ্যে আমাদেরই এই তিনটা দোকান সবচেয়ে বড়। আমরা তো বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন করে এই ব্যবসা করছি। সরকার যদি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের দিকে দেখে তাহলে আমরা ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো। আমার এই দোকানের ওপর ১২ জন নির্ভরশীল। দোকানে কর্মচারী রয়েছে চারজন।
ক্ষতিগ্রস্ত রউফ স্টোরের ম্যানেজার আইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাকির খাতাগুলো উদ্ধার করতে পারিনি। ১৫ লাখ টাকার মতো বাকি রয়েছে সেই টাকা এখন উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে।
জলঢাকা ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার রিফাত আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১১টা ২৭ মিনিটে সংবাদ পেয়ে আমরা সেখানে যাই। দোকানগুলোর সাটার বন্ধ ছিল। ভেতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। আমরা সাটার খুলে আগুন নেভানো শুরু করি। ওখানে কসমেটিকস সামগ্রী থাকার কারণে আগুন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তখন আমরা কাছাকাছি যে স্টেশনগুলো ছিল কন্ট্রোলের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা চাই। আমি চিন্তিত ছিলাম এ কারণে যে, সেখানে টিনসেড কাঁচাঘর অনেক বেশি। যদি আগুনটা ছড়ায় তাহলে পুরো জলঢাকা বাজারটায় আগুন লেগে যেত। এ কারণে বাকি স্টেশনগুলোর সহযোগিতায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হই। আমরা একটা জিনিস খেয়াল রেখেছিলাম যাতে আগুনটা না ছড়ায় আর ছড়াতেও পারেনি।
আনুমানিক ধারণা করা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপ করতে গেলে তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। আনুমানিক ধারণা করা বৈদ্যুতিক সট সার্কিটের কারণে এ আগুনটা লাগছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার রাতে বাজারের আজিজুল হক নামে এক ব্যবসায়ীর পাইকারি মনিহারি দোকানের ইলেকট্রিক মিটারের আগুন দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। তবে ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুন আশপাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে জলঢাকা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে নীলফামারী, ডোমার, ডিমলা, কিশোরগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা যোগ দেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুনে গোডাউনসহ তিনটি পাইকারি মনিহারি দোকান ও একটি হোটেলের মালামাল পুড়ে যায়।
শরিফুল ইসলাম/এমএএস