চীনে মাইক্রোসফট কোম্পানিতে চাকরি পেলেন পীরগাছার শাকিল
রংপুরের পীরগাছার নিভৃত এক গ্রামের উদ্যোমী যুবক শাকিল হোসেন। গ্রামের আর আট-দশটা যুবকের মতো নয়। অক্লান্ত পরিশ্রম আর জ্ঞান চর্চার দুঃসাহসিক অভিযাত্রিক শাকিল। মেধা, ধৈর্য ও প্রচেষ্টায় সফল তিনি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে নিজেকে এগিয়ে রাখা এই যুবক আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে চৌকস। একারণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার জায়গা হয়েছে চীনের সাংহাইয়ে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠানে।
সম্প্রতি শাকিল হোসেন চীনের সাংহাই ইউকরিসফট কোম্পানিতে মাইক্রোসফটের টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। ওই কোম্পানি থেকে শাকিল হোসেনকে যোগদানপত্র পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই সেখানে যোগদান করবেন তিনি। এর আগে তিনি ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইটি অফিসার, সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ও নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
শাকিল হোসেন পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের প্রতাপ জয়সেন গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও সাহেরা বেগম দম্পত্তির ছেলে। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে ২০১৭ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে চাকরি করেছেন।
জানা যায়, শাকিল হোসেন ২০১০ সালে পীরগাছার সাতদরগা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৫০ ও ২০১২ সালে ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৯০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে সিজিপিএ ৩.১১ পেয়ে সফলতার সঙ্গে কৃতকার্য হন।
বিজ্ঞাপন
শাকিলের বাবা রফিকুল ইসলাম পরিবারের স্বচ্ছতা আনতে একটা সময় সৌদি আরবে ছিলেন। প্রবাস জীবন শেষে বর্তমানে তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি নিজ গ্রামে স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের মধ্যে শাকিল হোসেন সবার বড়।
এদিকে বিশ্বখ্যাত বিদেশি প্রতিষ্ঠানে শাকিল হোসেনের চাকরি হওয়ায় খুশি তার পরিবার। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও গ্রামের ছেলে-মেয়েদের কাছে অনুপ্রেরণার গল্প হিসেবে বেড়ে ওঠা শাকিল হোসেনকে গর্ববোধ করছেন তার শিক্ষক, সহপাঠী ও গ্রামবাসী।
ছেলের নতুন চাকরির খবরে খুশি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের জেদ ছিল সে বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। আল্লাহর রহমতে দেশে কয়েকটি ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছে। এবার চীনে যাচ্ছে, এটা আমাদের সবার জন্য ভালো খবর। সে যেন সেখানে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে সেজন্য দোয়া করছি।
শাকিল হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, এ বছরের জানুয়ারিতে সাংহাই ইউকরিসফট থেকে মাইক্রোসফটের টেকনিকাল সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি জব অফার লেটার পেয়েছেন। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে মার্চ মাসে চাকরির জন্য চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চাকরিতে যোগদান করবেন।
তিনি আরও জানান, ইউকরিসফট ২০০২ সালে সাংহাই মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট এবং মাইক্রোসফট কর্পোরেশন কর্তৃত নির্মিত একটি যৌথ উদ্যোগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইউকরিসফট চীনের একটি বিশ্বস্ত গ্লোবাল আইটি পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি। বিশ্বব্যাপী ১৩টি অপারেশন সেন্টার এবং দশ হাজারের বেশি কর্মচারীর সঙ্গে ইউকিসফটের ডেলিভারি নেটওয়ার্কগুলো এশিয়া (চীন, জাপান এবং হংকং), উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ (বেলারুশ) কভার করে। বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের পেশাদার, ব্যাপক, দ্রুত, নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি এবং পরিষেবা প্রদান করে।
অন্নদানগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা আমাদের গ্রামের মানুষের জন্য গর্বের। শাকিল এই ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা সবসময়ই তার সাফল্য কামনা করছি।
ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, স্বর্ণালি দিনে শাকিল হোসেন ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় কলেজ থেকে স্বপ্ন জয়ের শক্তি অর্জন করে। অক্লান্ত পরিশ্রম আর জ্ঞান চর্চার দুঃসাহসিক সিঁড়ি ভেঙে আমাদের শাকিল অনেক ওপরে তার আসন অলংকৃত করছে। শাকিলের এই অগ্রযাত্রা অবহেলিত জনপদের সকল শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। এখন সাতদরগা থেকে সাংহাই স্বপ্নযাত্রায় এ এক নজরকাড়া পরিশ্রমী অভিযান।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে