ফেনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারাহীপুর গ্রামের মরহুম আবদুল মতিনের ছেলে মো. রুবেল তারেক। তিনি ২০০৩ সালে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৭ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি শেষ করেন। এরপর ঢাকার একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু বর্তমানে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তারেক ফেনী শহরে দিয়েছেন একটি চায়ের দোকান।

নানা স্বাদের ৫৩ ধরনের চায়ের বাহারি আয়োজনের সঙ্গে মিল রেখে তার দোকানের নাম দিয়েছেন 'চায়ের গ্রাম'। যা ইতোমধ্যে শহরে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। শহরের মিজান রোডস্থ আলিয়া মাদরাসা মার্কেটের ৩য় তলায় ওই দোকানে সারাদিনই চা প্রেমীদের ভিড় দেখা যায়।

উদ্যোক্তা মো. রুবেল তারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২০ সালের আগস্টে ছোট পরিসরে ২০০ স্কয়ার ফিটের একটি জায়গায় এই যাত্রা শুরু। তার আগে আমি একটি চকরি করতাম। অল্পকিছু মূলধন, বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে দোকান শুরু করি। ধীরে ধীরে প্রায় এক বছর অতিক্রম করার পর আমার প্রতি ফেনীর মানুষের আগ্রহ দেখে সামনে অগ্রসর হওয়া।

পরে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ১০০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে নতুন পরিসরে আবার চায়ের গ্রামের কার্যক্রম শুরু করি। ঢাকা-চট্টগ্রামে হরেক রকম চায়ের দেখা মিললেও ফেনীতে আগে তেমন কিছুই ছিল না। এই যাত্রায় ফেনীর চা-প্রেমীদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বর্তমানে দোকানে ২০ টাকা থেকে দোকানে ১০০ টাকা দামের চা বিক্রি হচ্ছে। এতে আমার দৈনিক প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় হয়।

শুরুর পথ সহজ ছিল না উল্লেখ করে এ উদ্যোক্তা বলেন, শুরুর সময়ে নানা ধরনের চা নিয়ে সাধারণের তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়েছে। বর্তমানে জেলা শহর ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের চায়ের স্বাদ নিতে মানুষজন আসছেন।

নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরে আনন্দিত এ যুবক। অনুভূতি জানিয়ে মো. রুবেল তারেক বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ৬ জন কাজ করছে। এ তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলা শহরে চায়ের গ্রামের শাখা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চায়ের গ্রামের ক্রেতাদের ধরন উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, এখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, মধ্যবয়সী এবং বিভিন্ন কাজে আলোচনা করতে বসার সুবিধার্থে লোকজন আসেন। তবে স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বাধা নিষেধ রয়েছে।

দোকানে চা তৈরির প্রধান কারিগর মো. রাসেল বলেন, আগে চাহিদা কম থাকলেও দিন দিন তা বাড়ছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলাতে অনেক বেশি ভিড় থাকে। এখন দৈনিক প্রায় ৪শ কাপ চা বানাতে হয়।

শ্রাবন্তী চৌধুরী নামে এক চা প্রেমী বলেন, ফেনীতে কোথাও এক সঙ্গে এত ধরনের চা পাওয়া যায় না। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ নিতেই মূলত এখানে আসি সবসময়।

আব্দুল্লাহ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এখানে চা খাওয়ার পাশাপাশি বসার জন্যও সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। যার কারণে প্রায় আসা হয়। এছাড়া ভিন্ন স্বাদের চায়ের পাশাপাশি পরিবেশনের ধরনও ব্যতীক্রমধর্মী।

মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ নামে চা প্রেমী বলেন, পরিবার নিয়ে বসে সময় কাটানোর মত সুন্দর একটি পরিবেশ থাকায় এখানে আসা। চায়ের মান অনুযায়ী দামও সহনীয় মনে হয়েছে।

ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনী শহরের এক দোকানে ৫৩ রকমের চা তৈরির বিষয়টি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এছাড়া তারেক চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। যা সমাজের অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।

তারেক চৌধুরী/আরকে