ওয়াকামা লিমিটেড নামের ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে পিকে হালদারের সঙ্গে মিলে মিশে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয় পিকে হালদার হালদারের সহযোগী সুব্রত দাস ও শুভ্রারান দম্পতি। যে কোম্পানির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি শুভ্রারানী দাস দুদকের হাতে আটক হয়েছেন। আটকের পর এ দম্পতিকে নিয়ে দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। নিজ গ্রামেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন সুব্রত দাস ও শুভ্রারানী দাস দম্পতি। গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে দম্পতির ঋণ জালিয়াতির কথা এখন সবার মুখে মুখে। রাতারাতি আলোচনায় আসা এ দম্পতিকে নিয়ে কথা বলেছেন তাদের স্বজনরা।
  
সুব্রত দাসের পিসি (ফুফু) হাসিরানী বসু জানান, তার বড় দাদা মৃত দুলাল হরি দাসের দুই ছেলে সুব্রত দাস ও দেবব্রত দাস দু’জনই দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করে। সেখানে দুই ভাই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে বলে তিনি জানতেন। সুব্রত’র স্ত্রী শুভ্রা গৃহিনী। কিন্তু বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সুব্রত দাস ও শুভ্রারানীর এসব খবর জেনে তিনিসহ তার পরিবার বিস্মিত হয়েছেন। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা (সুব্রত-শুভ্রারানী) এমন কাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। পূজা-পার্বনে বছরে দুয়েকবার তারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে।

তিনি আরও বলেন, সুব্রত দাস পারিবারিকভাবে তেমন অবস্থাশালী ছিলেন না। তার বাবা দুলাল হরিদাস ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তিনি যশোরের সম্মিলনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে অবসরে যান। বছর দেড়েক আগে পরলোকগমন করেন তিনি। তার বাবা দুলাল দাস এলাকায় একজন সম্মানীয় ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দুলাল দাসের দুই ছেলের মধ্যে সুব্রত দাস যিনি এলাকায় সাধন হিসেবে পরিচিত। ছোট ছেলে দেবব্রত দাস তিনিও ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করেন। সুব্রত দাসের শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করতো সুব্রত দাস।

দুদকের তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, দেশব্যাপী আলোচিত ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারনাশনাল লিজিং থেকে ২৫শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া পলাতক পিকে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) সহযোগী সুব্রত দাস ও শুভ্রারানী দাস দম্পতি। ওয়াকামা লিমিটেড নামের এই ভুয়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সুব্রত নিজেই এবং তার স্ত্রী শুভ্রারানী দাস কোম্পানির পরিচালক। কিন্তু ঋণ নেয়ার সময় যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানো হয়েছে তার কোনোটিই সঠিক ছিলো না বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

ইতোমধ্যে আত্মসাৎকৃত প্রায় ৯০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে এ দম্পতি গত তিন বছরে ৫ বার আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন বলে দুদক প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। পিকে হালদারের সঙ্গে মিলে মিশে এ দম্পতি বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ২২ মার্চ স্ত্রী শুভ্রারানী দাস দেশে ফিরলেও স্বামী সুব্রত দাস ফেরেননি। ওই দিনই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুভ্রারানী দাস দুদকের হাতে আটক হন। আটকের পর থেকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে দুদকের দাবি। এ দম্পতির সঙ্গে মোফাজ্জেল নামে আরেক ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে।
 

জাহিদ হাসান/এমএএস