দুবাই ও লিবিয়া হয়ে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়া হলো না গোলাম আজিম রুবেলের (২৪)। লিবিয়া পুলিশের তল্লাশি অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে দুই তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান রুবেল।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রুবেলের সঙ্গে থাকা পারভেজ নামের এক আত্মীয় তার মৃত্যুর বিষয়টি মুঠোফোনে রুবেলের পরিবারকে জানিয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশ সময় বুধবার (১২ জুলাই) গভীর রাতে বেনগাজি শহরের একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত গোলাম আজিম রুবেল নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পূর্ব লামছি প্রসাদ গ্রামের মজিদের হাট এলাকার গোলাম কিবরিয়ার ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রুবেল ছিলেন তৃতীয়।

নিহত রুবেলের বাবা গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে রুবেল। প্রথমে সে সৌদি আরব যাবে এমন সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে ইতালি যাবে বলে মনস্থির করে। পরিবারের ইচ্ছে না থাকলেও নিজের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে আট মাস আগে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় রুবেল। দুবাই গিয়ে কয়েকদিন থাকার পর সেখান থেকে লিবিয়া যায় সে। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রুবেলের সঙ্গে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কাদিরপুর ইউনিয়নের আরও তিন যুবক ছিল। তারা মোট আটজন ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়ার বেনগাজি শহরের একটি বাসায় অবস্থান করে।

লিবিয়া প্রবাসী পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দেড় মাস আগে বেনগাজি শহরের ওই বাসায় লিবিয়া পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে রুবেলসহ তাদের কয়েকজনকে আটক করে। পরবর্তীতে টাকা দিয়ে তারা ছাড়া পায়। বুধবার রাতে পুনরায় লিবিয়া পুলিশ ওই বাসায় তল্লাশি অভিযান চালালে রুবেলসহ সবাই বিভিন্ন স্থানে পালানোর চেষ্টা করে। রুবেল দুই তলা ভবনটির ছাদে গিয়ে পাশের সিলিং ধরে ঝুলে থেকে পুলিশের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ ঝুলে থাকার পর নিচে পড়ে গিয়ে মারা যায় রুবেল।

রুবেলের ফুফাতো ভাই রবিন বলেন, লিবিয়ায় থাকা রুবেলের চাচা ও চাচাতো ভাইদের সহযোগিতায় তার মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। রুবেলের মরদেহ দেশে আনতে তার পরিবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছে। 

ঘোষবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেএম আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রুবেলকে হারিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন রুবেলের মা সাদিয়া খাতুন, বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তার বাবা গোলাম কিবরিয়া।

এ ব্যাপারে কবিরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  মর্মান্তিক এ ঘটনাটি আমি বিভিন্নভাবে জেনেছি। গতকাল রুবেলের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। পরিবারের সবাই এখন শোকে কাতর। মরদেহ চিহ্নিত হওয়ার পর বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য সরকারিভাবে প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি তার মরদেহ মা-বাবার কাছে বাড়িতে ফেরত আসবে।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ