সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। মোট আমদানির পরিমাণ বাড়লেও ডলার সংকট ও বন্দর দিয়ে ফলসহ অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি কমায় রাজস্ব আহরণে ঘাটতি বলে দাবি আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের। 

বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৬১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়, অন্যদিকে ২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন। আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বেশি আমদানি হলেও রাজস্ব আদায় কমেছে ৩৪৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। 

এই বন্দর দিয়ে গত অর্থবছরে ফল আমদানি না হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তবে ডলার সংকট ও এলসি না পাওয়ায় সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা তাদের। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমদানি-রপ্তানিতে আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তাদের। 

২১-২২ অর্থবছরের শুধু তাজা ফল থেকেই রাজস্ব আদায় হয় ৫৮৬ কোটি টাকা। অথচ ২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ১৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে ফল থেকে। ফল বাদ দিলে গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২২১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এমনকি পাথরে ৬৬ কোটি টাকা, পেঁয়াজে ৫২ কোটি ও শুটকিতে ২৯ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। 

স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম মাসে (জুলাই) ৬১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, আগস্টে ৭১ কোটি ১৯ লাখের বিপরীতে ৪৫ কোটি ৮৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৯০ কোটি ৭৫ লাখের বিপরীতে ৪৫ কোটি ২৩ লাখ, অক্টোবরে ৯০ কোটি ৯৮ লাখের বিপরীতে ৪৯ কোটি ৭৪ লাখ, নভেম্বরে ৯৩ কোটি ২ লাখের বিপরীতে ৫৪ কোটি ২৫ লাখ এবং ডিসেম্বরে ৯৩ কোটি ৯৭ লাখের বিপরীতে ৪৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আদায় হয়। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বিপরীতে ৫৩ কোটি ১৭ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৮২ কোটি ৪৫ লাখের বিপরীতে ৪২ কোটি ৫৪ লাখ, মার্চে ৯৮ কোটি ৩০ লাখের বিপরীতে ৬৪ কোটি ৫৪ লাখ, এপ্রিলে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখের বিপরীতে ৪৪ কোটি ৯০ লাখ, মে মাসে ৬৫ কোটি ৩৪ লাখের বিপরীতে ৭০ কোটি ৬১ লাখ ও জুনে ৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বিপরীতে ৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতবছরের মে মাস ছাড়া কোন মাসেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। 

আমদানিকারক মো. নাসিম বলেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের ঠিকমতো এলসি দিতে পারেনি। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ছাড়া যে-সব পণ্যের ওপর অধিক শুল্ক রয়েছে এমন পণ্যের কোনো এলসি দিতে পারেনি ব্যাংক। যার কারণে ওসব পণ্য বন্দর দিয়ে তেমন একটা আমদানি হয়নি। যার কারণে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। 

সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মো. মাইনুল ইসলাম জানান, সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিলে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু অধিক শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি না হওয়ায় কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। ফল আমদানি কমলেও বন্দর দিয়ে পাথর, পেঁয়াজ, কৃষিপণ্য ও গোখাদ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ জানান, ফল বাদ দিলে অন্যান্য পণ্য আমদানিতে আগের অর্থবছরের চেয়ে ২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ২২১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের সমপরিমাণ ফল আমদানি হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০২ কোটি বেশি রাজস্ব আদায় হতো। এলসি সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়া ও অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি কম হওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। ফল আমদানি স্বাভাবিক থাকলে এ বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তো।

উল্লেখ্য, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪২ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল। ২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি, ১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঘাটতি ও ১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৪৩ কোটি টাকা। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এএএ