আগামী মাসে চালু হতে যাচ্ছে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চা বোর্ড। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষা। সামনের মাসের শুরুতে এ নিলাম কেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) থেকে ব্রোকার হাইজ সমূহের যৌথ উদ্যোগে পঞ্চগড় চেম্বারের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুইদিনব্যাপী ‌‘অনলাইন টি অকশন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা। প্রশিক্ষণে কীভাবে অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে চা কেনা-বেচা করা হবে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণে ব্রোকার হাউজ, ওয়্যার হাউজের মালিক, স্থানীয় বিডার ও বায়ার মিলে ৪০ জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন আইটি বিডি টেক অ্যাপসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জায়েদ বিন অপু ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের বিপণন কর্মকর্তা আহসান হাবিব।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চেম্বার প্রেসিডেন্ট আব্দুল হান্নান শেখ। এ সময় বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের বিপণন কর্মকর্তা আহসান হাবিব, বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন, অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহজাহান খান ও পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মল টি গার্ডেন আয়োজিত চা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা বলা হয়। জুনে চালুর সম্ভাবনা থাকলেও তা আগামী সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময়ে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি দেশের এই তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রটি উদ্বোধনের কথা বলা হয়েছে।

নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর এই পাঁচটি জেলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি উপেক্ষা করে ২০২২ সালের দেশে মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ চা উৎপাদন করেছে পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলো। গত বছর জেলায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২৬০ কোটি টাকা। এবার ২ কোটি কেজি চা উৎপন্ন হবে বলে আশা করছেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে ৯টি নিবন্ধিত ও ২১টি অনিবন্ধিত বড় চা বাগান (২৫ একরের বেশি) রয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৩৫৫টি। এ নিয়ে উত্তরের ৫ জেলায় ১২ হাজার ৭৯ একর সমতল ভূমিতে চা চাষ হচ্ছে। নিবন্ধিত এক হাজার ৩৬৮টিতে ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হয়েছে। এসব চা বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে সাত হাজারের বেশি চা শ্রমিকের। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় এ পর্যন্ত ৪৮টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ২৫টি চা কারখানা। ২০০৫ সালে প্রথম তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি লিমিটেড চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করে একে একে জেলায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ২৬ টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা।

তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ১২টি ব্রোকার হাউজ ও ৮টি ওয়্যারহাউজ আবেদন করেছে। এর মধ্যে পাঁচটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চা শিল্প উন্নয়নে চা চাষি ও শ্রমিকদের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু হলে কী সুবিধা হবে সে প্রসঙ্গে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজারে বিক্রি করতে হয়। এতে কারখানা মালিকদের পরিবহণ খরচ বেড়ে যায়। এই চা নিলাম কেন্দ্রের কাজ শুরু হলে বায়াররা আরও মানসম্মত চা কিনতে পারবেন। ফলে এই খাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতিতে সংযোগ হবে এক নতুনমাত্রা। 

এসকে দোয়েল/এএএ