‘চাঁদরাতে’ বর্ণিল বাকৃবি
ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে বছরে ঈদ আসে দুটি। সেই ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন প্রস্তুতি আর আনন্দ উদযাপন শুরু হয়ে যায় আগের রাত থেকেই। যাকে বলা হয় চাঁদরাত। হিজরি রীতি মেনে এবছরের আনন্দময় দুটি রাতই উদযাপন করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আরেকটি দিবস আছে, যেটিকে ঈদের দিনের সাথে তুলনা করা হয়। সেটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার দিন। সে হিসেবে পরীক্ষার আগের রাত বাকৃবি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘চাঁদরাত’।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৫ আগস্ট) সারা দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। তাই শুক্রবার রাতটা বাকৃবির সবার জন্য বিশেষ কিছু।
বরাবরের মতো এবারও বর্ণিল সাজে সেজেছে ‘প্রকৃতিকন্যা’ খ্যাত ক্যাম্পাসটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল রঞ্জিত মার্কেটের (কে.আর) পূর্ব গেট থেকে শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন পর্যন্ত, এরপর কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে এবং আব্দুল জব্বারের মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী স্টল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ, বিভিন্ন ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ও আঞ্চলিক সমিতির পক্ষ থেকে এসব স্টল বানানো হয়েছে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায়। প্রায় ৪০টির মতো স্টল সাজাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন শিক্ষার্থীরা। ফুল, বেলুন, আলোকসজ্জায় বর্ণিল সাজে রঙিন হয়ে উঠেছে বাকৃবি ক্যাম্পাস। এর পাশাপাশি প্রতিটি স্টলেরই রয়েছে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও ঐতিহ্যবাহী একাধিক সরঞ্জাম।
বিজ্ঞাপন
এ রাতে নেই হলে ফেরার তাড়া। ক্লাস, পরীক্ষার ব্যস্ত সূচিতে ঠাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এই দিনটি তাই পরম আরাধ্য। তাইতো সবাই যে যার মতো করে উদযাপনে মত্ত। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছে স্টলগুলো, কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতে, কেউ বা স্টলে বসেই সমসুরে গান করছে। অনেকে আবার বিশেষ এই দিনে শাড়ি, পাঞ্জাবিতে সাজিয়েছেন নিজেকে। পরিবার পরিজনের বাইরে বন্ধু, সহপাঠী তথা প্রাণের ক্যাম্পাসে সবার সঙ্গে মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা কাটিয়ে বাকৃবিকে করে তুলেছেন মনোমুগ্ধকর ও প্রাণচঞ্চল।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তারাও শামিল হয়েছেন শিক্ষার্থীদের এই উৎসবে। তারাও ঘুরে ঘুরে দেখছেন স্টলগুলো, ফ্রেমবন্দি করছেন মুহূর্তগুলো। এই আনন্দ আয়োজনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তাকর্মীরা।
বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল সাঈদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এটি আমার প্রথম কোনো উৎসব। ক্যাম্পাসে নতুন জুনিয়র আসবে, এই উপলক্ষ্যে সবাই খুব আনন্দ করছে। আমি নিজে পাঞ্জাবি পরেছি। নিজেকে এই উৎসবে শামিল করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিওলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. ইফতেখার জাহান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতটি বাকৃবিতে চাঁদরাত হিসেবে উদযাপিত হয়। এই রাতে সবাই সেজেগুজে বের হয়ে নিজের মতো করে উদযাপন করে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের সবরকম সহায়তা করে থাকে।
চাঁদরাতে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন শেষে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি, বাকৃবিতে যারা পরীক্ষা দিতে আসবে তাদের সহযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো উপভোগ করবে। এখানে সবাই একটি প্রাণবন্ত সময় কাটাচ্ছে, এটি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/জেডএস