জেড আহসাব আলীর উচ্চতা ছিল মাত্র তিন ফুট। কিন্তু স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ভর্তি হয়েছিলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। তিনি রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

ক্যাম্পাসের অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে প্রতিযোগিতায় কোনো অংশে কমছিলেন না আহসাব। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। মৃত্যুর কাছে হেরে যেতে হলো তাকে। বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমালেন ওপারে।

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন জেড আসহাব আলী। তিনি মেহেরপুরের গাংনী থানার কোদালকাঠি গ্রামের মো.আক্কাস আলীর ছেলে। শনিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি ঢাকায় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ মাস ধরে আসহাব ফুসফুসে ফাঙ্গাস, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে গত ১২ আগস্ট ঢাকায় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

আহসাবের নিজ গ্রামের কোদাইলকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে তিনি বৃত্তি পান। পরবর্তীতে পাশের গ্রামের কুমারীডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে জেএসসিতে জিপিএ-৫ ও গাংনী পাইলট হাই স্কুল থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে সফলভাবে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। 
কুষ্টিয়ার পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করেন আহসাব। এরপর ভর্তি হন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে জেড আহসাব আলী 

তবে আহসাবের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না শিক্ষক-সহপাঠীসহ সবাই। আহসাবের মৃত্যুতে তাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

আহসাবের এক সহপাঠী বলেন, আসহাব এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ও ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার মানুষ ছিল। মিশুক ও হাসিখুশি থাকতো সব সময়।

আসহাবের বাবা মো. আক্কাস আলীর সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আসহাব ছোট থেকেই অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে এতদূরে এসেছে। ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই ওপারে পাড়ি জমাল। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, আসহাবের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত এক দুঃখজনক। ও খুব ভালো ছেলে। ক্যাম্পাসে সবার সঙ্গে হাসিখুশিভাবে থাকতো। ওর অভাব আমাদের শোকের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আমরা ওর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। 

আশিক জামান/আরকে