তিস্তার পানিতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ
গেল কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৩ থেকে ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে রাখা হয়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইসগেট। এতে প্লাবিত হচ্ছে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল।
এদিকে তিস্তা নদীর সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানীর ছাতুনামা কেল্লাপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘরের বাসিন্দারা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে মুজিব বর্ষ উপলেক্ষ্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ঘরগুলো সুবিধাভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের পর থেকেই তিস্তা নদীর সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সুবিধাভোগীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তায় কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও তার চেয়ে বেশি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রবেশের প্রধান ফটক অংশে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবেশের গলি ও উঠানের পানি প্রায় হাঁটু সমান।
বিজ্ঞাপন
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১নং ঘরের বাসিন্দা বলেন, নদীর পানি বাড়লেই আমাদের এখানে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠে যায়। সবাই আপনাদের মতো এসে দেখে যায় কিন্তু কোনো কাজ হয় না।
৬নং ঘরের বাসিন্দা বাহার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠে আসে। এখানে যাওয়ার আসারও রাস্তা নেই। সবসময় এক হাঁটু পানি থাকে। সবাইকে আমরা বলি কিন্তু কোনো কাজ হয় না।
৪৯ নং ঘরের বাসিন্দা জয়গুন বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন নদীতে পানি বাড়ে তখন আমাদের খুব সমস্যা হয়। এটা তো সমাধান করা নাগবে। নদীতে পানি বেড়ে আমার ঘরের পূর্ব পাশের মাটি ভেঙে গেছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার কয়েকদিন আগে আসছিল, এসে দেখে গেছে। কিন্তু কাজের কাজ তো একটাও হয় না। সবার কাছে গেছি কোনো কাজ হয় না।
৪৮ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মশিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর পানি সামান্য বাড়তেই আমাদের এখানে উঠানে পানি বাড়তে থাকে। শুধু উঠানে নয়, বারান্দা ও রুমেও পানি প্রবেশ করে। একদিন তো রাত ৩টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি জুতা ভাসি নিয়ে গেছে। রুমে পানি উঠেছিল বিছানা থেকেই হাত-মুখ ধুয়েছি। সরকারের লোকজন যখন বাড়িগুলো তৈরি করেছে তখন আরেকটু উঁচু করলে পানি উঠতো না। আর কয়েকটা বাড়িতে ফাটল ধরেছে, অলিয়ার রহমান নামের একজন এসে কয়দিন পরপর এসে ঠিক করে দিয়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউপির চেয়ারম্যান একরামুল হকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।
ডিমলা উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মেজবাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বন্যায় রাস্তাটি (আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তা) ভেঙে গেছে। কাবিখা প্রকল্পে রাস্তাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তো এখানে নতুন এসেছি। আমি বিষয়টি শুনেছি যে নদীতে পানি বাড়লে ওখানে পানি ওঠে। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করব। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শরিফুল ইসলাম/আরকে