চার দফা দাবি আদায়ে ফেনীতে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক, বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থী এবং সাধারণ ডিএমএফ শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতি চলছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। 

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জান দেব, মান নয়। মর্যাদার ক্ষেত্রে কোনো আপস হবে না।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের সরকারিভাবে নিয়োগ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা তথা ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা। দশক পেরুলেও এখন পর্যন্ত দাবি পূরণ হয়নি স্বাস্থ্যসেবায় সংশ্লিষ্ট এই মানুষগুলোর। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডিপ্লোমা মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) গঠন করলেও এক দশক ধরে এই পদে নিয়োগ বন্ধ করে রেখেছে সরকার। বঙ্গবন্ধুর প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয় উল্লেখ থাকলেও এর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। 

বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএমপিপিএ) ফেনী জেলা শাখার সভাপতি ডা. নুর উল্যাহ মিয়া লিটন বলেন, ডিএমএফ চিকিৎসক ও ম্যাটস শিক্ষার্থীরা চার দফা শতভাগ যৌক্তিক। বিগত এক দশকের বেশি সময় আমরা এ দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। তাদের দাবির সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং যৌক্তিক দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাব আমরা।
 
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক আবদুল হাকিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের একটি মহল চান না ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা তাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝে পাক। সেজন্য তারা আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অ্যালাইড হেলথ বোর্ড গঠন করে তারা ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের এক বছরের ইন্টার্নশিপ বাতিলসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। 

রাবিনা নামে আরেক আন্দোলনকারী বলেন, অ্যালাইড হেলথ বোর্ডের আওতায় ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবিসমূহ মানা না হবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। 

সোহান নামে আরেক আন্দোলনকারী বলেন, বঙ্গবন্ধু পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রাখলেও আমরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনতিবিলম্বে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করে আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ মেনে না নিলে আমরা কঠোরতর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। 

এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রশিক্ষণরত দেড় শতাধিকেরও বেশি চিকিৎসকের কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। গত দুইদিন কর্মবিরতির ফলে জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগসমূহে স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল। 

তিনি বলেন, ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের আন্দোলন তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তাদের আকস্মিক বিরতিতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এর আগে গতকাল সোমবার একই দাবিতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন হাসপাতালে কর্মরত প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।

আরএআর