সুনামগঞ্জের হাওরে নৌকা ডুবে দুজন নিখোঁজের ২ দিন পর উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল। তবে এ কারণে পুলিশের অসহোযগী আচরণকে দায়ী করছে ফায়ার সার্ভিস। 

এর আগে গতকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) পুরো দিন নিখোঁজ দুজনকে উদ্ধারে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধার করতে পারেনি তাহিরপুর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (২৯) আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টা থেকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল।

উদ্ধারের জন্য সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ প্রশিক্ষিত ডুবুরি দল ও উদ্ধারকর্মী থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের কাছে পুলিশ বা স্থানীয় কেউ তথ্য দিয়ে উদ্ধারের সাহায্য চায়নি বলে জানিয়েছে তারা। দুর্ঘটনার তথ্য জানতে ওই দিন ভোরে থানার ডিউটি অফিসারকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ফোন দিলেও তিনি কোনো তথ্য জানেন না বলে এমনটা দাবি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স তাহিরপুর স্টেশন কর্মকর্তার। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় সারাদিন নিজেরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করলেও ফায়ার সার্ভিসে কোনো যোগাযোগ করেনি পুলিশ। এদিকে নিখোঁজের পর (২৭ আগস্ট) রাতে একবার ফোন করার পর আরেকবার কেন ফোন করবেন এমন প্রশ্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পরে রাতেই তাহিরপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তাকে দুজন নিখোঁজ সেটা সম্পর্কে অবগত করেছি। উনারা বলছেন সকালে উদ্ধার অভিযানে ডুবরি দল পাঠাবেন। একবার জানানোর পর তাদের কী ভিকটিমকে উদ্ধার করা দরকার নাকি কথা বলা দরকার। আমাদের পুলিশকে কেউ একবার জানালেই আমরা আমাদের কাজে লেগে যাই। উনাদের একবার জানানোর পর উনারা উনাদের কাজ দায়িত্ব নিয়ে করার কথা।

>>>সুনামগঞ্জে ঝড়ের কবলে পড়ে হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

এ বিষয়ে তাহিরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা মো. চাঁন মিয়া বলেন, ওসি সাহেব রাতে আমাকে ফোন দিয়ে শুধু দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন। এরপর নিখোঁজদের পরিবারের সাথে কথা বলে আমাদের উদ্ধার অভিযানে ডুবরি দল যাবে কি না সেটা জানানোর কথা। ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থাও করার কথা। এরপর উনি কিছুই জানাননি। ভোরে আমি নিজ থেকে থানার ডিউটি অফিসারকে ফোন দিলাম দুর্ঘটনার তথ্য জানতে। ডিউটি অফিসার আমাকে কোনো তথ্য জানেন না বলে জানান। তারপরও আমি সদর স্টেশনে ডুবরি দলের জন্য কথা বলে রেখেছি। কিন্তু পুলিশসহ কেউ আমাদের কাছে সাহায্য চায়নি, কোনো তথ্যও দেয়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সুনামগঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা নিউটন দাশ বলেন, উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য কেউ সাহায্য চায়নি। কেউ আমাদেরকে কিছু জানায়নি। একটা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে কোথায় কিভাবে ঘটনা ঘটেছে, কয়জন নিখোঁজ আছেন। ঘটনাস্থল পর্যন্ত যেতে গাড়ির বাইরে যদি নৌকা লাগে সেটা কিভাবে পাব এসব বিষয় জানাতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। পুলিশ বা কেউ একজন রেস্পন্ডার থাকতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন বা মানুষের সহযোগিতা লাগে। আমরা কিছুই পাইনি। এতো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো ফায়ার সার্ভিসকে কেউ জানানোরও প্রয়োজন মনে করেনি। বরং দুর্ঘটনার তথ্য জেনে সাহায্য করতে আমাদের অফিসার উল্টো থানাতে ফোন করেও কোনো তথ্য পাননি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সুনামগঞ্জের উপ-সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়াঁর সঙ্গে সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, তাহিরপুরের দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। মধ্যনগরেও গতকাল রাতে একটি নৌ দুর্ঘটনার পর সুনামগঞ্জ থেকে  মধ্যনগর যেতে সময় বেশি লাগবে তাই ময়মনসিংহ থেকে ডুবুরি দল এনে এজনকে উদ্ধার করেছি। তাহিরপুরের খবর পেলেও সেখানে উদ্ধারকারী দল যেত। আমি এখনই কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

কথা বলার কিছুক্ষণ পর এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে ডুবরি দল ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার (২৯) আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টা থেকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবরি দল। তবে বিশাল হাওরে নৌকাডুবির প্রকৃত স্থান খুঁজে না পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাহিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাহিরপুর সদর থেকে নৌকা করে নিজে বাড়ি ফেরার পথে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ছিলানী তাহিরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে ফয়েজ মিয়া (৪০), একই গ্রামের মছরব আলীর ছেলে শাহ আলমের (৩৫) নৌকা ডুবে তারা দুজন নিখোঁজ হন। উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মাটিয়ান হাওরের বোয়ালমার স্লুইস গেট এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়।

সোহানুর রহমান সোহান/আরকে