নিহত শাহজালাল তালুকদার পারভেজ

পূর্ব শত্রুতার জেরে বগুড়ার শাজাহানপুরে কলেজশিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল তালুকদার পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল সন্ত্রাসীরা। এমন অভিযোগে নিহতের স্ত্রী শামসুন্নাহার বাদী হয়ে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেছেন। এই মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর)) দুপুরে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম। 

এর আগে শনিবার সকালে শাহজালাল তালুকদার পারভেজকে শাজাহানপুরের আশেকপুর ইউনিয়নের মাথাইল চাপড় এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

পারভেজ উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল এলাকার সাবেক মেম্বার মনসুর তালুকদার ওরফে মন্টু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় বিএম কলেজের প্রভাষক ও আশেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয় আশেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলীর দাবি, পূর্বের এক হত্যা মামলায় বড় ভাই সাক্ষী হওয়ায় ছোট ভাই পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন সাবরুল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার। হত্যার দেড় মাস আগে থেকে হুমকিও দিয়ে আসছিলেন সাগর তালুকদার। এই সাগর সম্পর্কে নিহত পারভেজের ভাতিজা।

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন- আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল গ্রামের রুকসানা আক্তার ও উজ্জ্বল (৪০)। এরা সাগরের বোন ও চাচা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাগর তালুকদার ও তার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে সাবরুল বাজার ও পারভেজদের প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। শনিবার সকালে পারভেজ সাংসারিক প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে মাথাইল চাপড় এলাকায় সাগর তালুকদারের সন্ত্রাসী বাহিনী তার পথরোধ করে হাসুয়া, রামদা দিয়ে হামলা করেন। তাদের হামলা থেকে বাঁচতে পাশের সুমনের বাড়িতে আশ্রয় নেন পারভেজ। কিন্তু সেখানে গিয়েও কুপিয়ে তার হাত বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পরে পারভেজের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে পারভেজকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মে সাবরুল এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সিহাব বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাগর। মামলার চার্জশিটে সিহাব বাবু হত্যার ঘটনায় সাক্ষী করা হয় সাবরুল বাজারের তৎকালীন সভাপতি পারভেজের বড় ভাই নুরুজ্জামান তালুকদার পান্নুকে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন সাগর। এসবের জেরে নুরুজ্জামান তালুকদারকে দেড় মাস আগে তুলে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করেন সাগর ও তার লোকজন। ওই সময় থেকে পারভেজকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তারা।

নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, চার্জশিটে আমার নাম দেখে প্রায় দুই মাস আগে সাগর দোকানে এসে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে কেন মামলার সাক্ষী হয়েছি। সাক্ষী থেকে সরে যেতে হবে। আমি বলেছিলাম সাক্ষীর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তখন থেকে আমাদের ওপর তার ক্ষোভ। এরপর আমাকে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে। তখনই সাগর আমাকে বলেছিল, ‘তোকে শুধু চাকু মারলাম। তোর ভাইকে খুন করে ফেলবো।’ পরে পারভেজকে হুমকি দিতো সাগর। এসব নিয়ে থানা-পুলিশের কাছেও গিয়েছিল পারভেজ।

সাগর তালুকদারের বিষয়ে আশেকপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, সাগর এই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকার কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। বিভিন্ন এলাকার সব সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে তার এখানে এসে আশ্রয় নেয়। এই সাগর আমাকেও হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আমি এসব বিষয় জানতে পেরে আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ বিষয়টি আমলে নেয়নি।

শাজাহানপুর থানা পুলিশ সূত্র বলছে, সাগর তালুকদারের নামে সাবরুলের সিহাব বাবুসহ দুটি হত্যা মামলা আছে। চাঁদাবাজি মামলা ৪টি, মাদক মামলা ৩টি, অস্ত্র আইনে মামলা ১টি, দ্রুত বিচার আইনে ১টি, অন্যান্য ধারায় ২টিসহ মোট ১২ টি মামলা রয়েছে। তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এসব বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, পারভেজকে হত্যার ঘটনায় সাগরের হুমকির বিষয়টি আমরা শুনেছি। গত ১৩ আগস্ট সাগর তালুকদার এক মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে আছেন। তদন্তে সম্পৃক্ততা পেলে তাকেও আসামি করা হবে। আজকে দুজন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

আরএআর