কেউ হেঁটে, কেউ গাড়িতে, আবার কেউ কেউ বড় বড় নৌকা নিয়ে ছুটে এসেছেন সিংড়ার ফেরিঘাটে। তারা এসেছেন চলনবিল তথা আবহমান বাংলার নদী মাতৃকার প্রাণের উৎসব নৌকা বাইচ দেখতে। সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসতে থাকেন দর্শনার্থীরা। অনেকে পরিবার-পরিজন, প্রিয়জন ও সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করতে আসেন।

নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হলো চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসব। তবে এবারের উৎসব ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ। 

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় নৌকা বাইচ উৎসবের উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। 

দুই ধাপে হওয়া এই প্রতিযোগিতায় সকালে সিংড়াসহ নাটোরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ১৮টি ছোট ও মাঝারি নৌকা অংশগ্রহণ করে। এ নৌকা বাইচ উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ বিকেলে। যেখানে নাটোর, বাঘাবাড়ী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া ও পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন নৌকা বাইচের প্রতিযোগিরা।‌ মোট ১৬টি বড় নৌকা নিয়ে হয় দ্বিতীয় ধাপের নৌকা বাইচ। নানা বর্ণে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন নৌকা‌গুলো আত্রাই নদীতে তুমুল বাইচ শুরু করে। যা দেখে হাজার হাজার দর্শনার্থী আনন্দে মেতে ওঠেন। এ সময় নৌকা বাইচ দেখতে নদীর দুপাড়ে হাজারও মানুষের উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়। 

নাটোর সদর থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা স্বাধীন রহমান বলেন, আমার জীবনে প্রথম নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। এখানে এসে বিভিন্ন সাজের নৌকা দেখে দারুণ আনন্দ পেয়েছি। প্রতি বছর এমন আয়োজন করার আহ্বান জানান তিনি।

রাজশাহী থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা সুজন আহম্মেদ বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে নৌকা বাইচ উৎসবের কথা জানতে পেরেছি। ভোরে রওনা হয়ে এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ এখন বিলুপ্তির পথে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর এই আয়োজন নৌকা বাইচের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

চলনবিল নৌকাবাইচ উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিন জানান, চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসবে নাটোরসহ আশেপাশের জেলার ছোট-বড় মিলে প্রায় অর্ধশত নৌকা অংশগ্রহণ করছে। এই আয়োজনটি ঘিরে চলনবিলের মানুষ উৎসবে মেতে উঠেছে। আত্রাই নদীর দু-পাড়ে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

প্রতিযোগিতার শেষ রাউন্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসব-২৩ এর চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজাদপুরের নৌকা ‘সপ্নের তরী’। দ্বিতীয় স্থান দখল করে একই এলাকার ‘বাংলার বাঘ’ নামে অন্য আরেকটি নৌকা।

পরে সন্ধ্যায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। চ্যাম্পিয়ান দলকে ১৫০ সিসি একটি মোটরসাইকেল ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী দলকে বড় ফ্রিজ পুরস্কার দেওয়া হয়।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, চলনবিলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যর অংশ নৌকা বাইচ। এই ঐতিহ্যটি ধরে রাখতে চতুর্থবারের মতো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হলো। আমরা চলনবিলে নৌকা বাইচ উৎসব করি, শিক্ষা উৎসব করি, কর্মসংস্থান উৎসব করি ও সাংস্কৃতিক উৎসব করি। এগুলোর একটাই উদ্দেশ্য যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে একটি প্রগতিশীল প্রজন্ম হয়ে গড়ে ওঠে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা, পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস।

কেএ