মায়ের সঙ্গে ঢাকা গিয়ে হারিয়ে যান দুই ভাই। প্রায় ২৫ বছর পর ছোট ভাই মো. মাইদুল ইসলাম (৩০) ফিরে এসেছেন। তবে বড় ভাই মতিয়ার রহমান (৩৫) এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। মাইদুল ইসলামকে ফিরে পেয়ে আনন্দ ভাসছে পুরো পরিবার। 

মাইদুল ইসলাম কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকার উত্তর সরকাটারি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদের ছেলে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর মাইদুল ইসলামের আসার খবর পেয়ে তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন এলাকাবাসী।

শনিবার ( ১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপালপুর উত্তর সরকাটারি গ্রামে ফিরে আসেন মাইদুল। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালপুর উত্তর সরকাটারি গ্রামের আব্দুস সামাদ-বানেছা বেগম দম্পতির  দুই ছেলে মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান। তাদের বয়স যখন ৫-৭ বছর তখন পারিবারিক দ্বন্দ্বে  বাবা-মায়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়। পরে অন্যত্র বিয়ে করেন বানেছা বেগম। তিনি মাইদুল ও মতিয়ারকে নিয়ে প্রথমে রংপুর পরে গাইবান্ধা শেষে ঢাকা চলে যান। ঢাকায় বানেচা বেগম দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে সংসার পাতলেও দুই ছেলের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় দুই ভাইকে। সেই থেকে দুই ভাই নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলেকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন মা। তবে বাবার পরিবারের লোকজন আশা ছেড়ে দেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আপন ঠিকানা’ নামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাইদুল ইসলামকে খুঁজে পায় পরিবার। তবে বড় ভাই মতিয়ার রহমানের সন্ধান মেলেনি। মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের বাবা  আব্দুস সামাদের আশা নিশ্চয়ই কোনো একদিন তার বড় ছেলেকেও খুঁজে পাবেন তিনি।

মাইদুল ইসলামের চাচা বদিউজ্জামাল বলেন, মাইদুল ও মতিয়ার আমার ভাতিজা। ওরা দুজনে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় ২৫ বছর আগে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমরা তাদের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবান মাইদুলকে ফিরে পেলাম। আশা করি কোনো একদিন মতিয়ারকেও খুঁজে পাব।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুর হোসেন বলেন, আমি দেখেছি মাইদুল ও মতিয়ার ৫-৬ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে ঢাকা চলে যান। কিছু দিন পর শুনি ওরা দুই ভাই হারিয়ে গেছে। প্রায় ২৫ বছর পর ছোট ভাই মাইদুল ফিরে এলো। মতিয়ারকে পাওয়ার আশায় আছে তার পরিবার।

মাইদুল ইসলাম বলেন, মা আমাদের দুই ভাইকে অন্যের বাসায় রেখেছিল। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ির মালিক আমাদের দুই ভাইকে মারধর করে বেঁধে রেখেছিলেন। পরে ওই বাড়ির মেয়ে আমাদের ছেড়ে দিয়ে বলে তোমরা দুজন চলে যাও। পরে আমি ভাইসহ ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে মাকে অনেক খুঁজেছি। মা কোথায় থাকতো ঠিক মনে পড়ছিল না। ভাই আমাকে ছেড়ে মাকে খুঁজতে যাওয়ায় তাকেও হারিয়ে ফেলি।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় আশা ছিল বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার সাথে বড় ভাইকেও দেখতে পাব। বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরবো। কিন্তু বাবা-মাকে পেলাম, ভাই কোথায় আছে জানি না। বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে কী শান্তি পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

মাইদুল ইসলামের বাবা আব্দুস সামাদ বলেন, আমার দুই ছেলেকে হারিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ওর মায়ের কাছে লোক পাঠিয়েছিলাম। একবার বলতো ছেলে দুটো হারিয়ে গেছে। আবার বলে মারা গেছে। আমি প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। ছোট ছেলে মাইদুল, বউমা মাহমুদা ও নাতিদের খুঁজে পেয়েছি। মনে একটু শান্তি পেয়েছি। আল্লাহ পাক যদি বড় ছেলে মতিয়ারকে ফিরিয়ে দেন, তাহলে আমার আর কোনো চাওয়াপাওয়া নেই

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, সন্তোষপুর ইউনিয়নে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর জানতে পেরেছি। সেখানে আব্দুস সামাদ নামে এক বাবার দুই সন্তান হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এক ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে। মাইদুল ইসলাম যদি চায় তাহলে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনাসহ পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।

জুয়েল রানা/আরএআর