ঠাকুরগাঁওয়ে নিজেকে আত্মগোপনের রেখে মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগে প্রতারক স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্ত্রী ফারহানা। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রতারণায় সহায়তা করার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে প্রতারক স্বামী পলাতক রয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার ভাকুড়া গ্রামের ফয়সাল আহম্মেদ বিপ্লবের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন বর্তমানে বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও’র ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ঠাকুরগাঁও সদরের মুন্সিরহাট শাখায় কর্মরত। তিনি সেখানের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ১১ বছর আগে ফয়সালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ১০ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। বিপ্লব দুই বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুর আদাবরে একটি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করছেন।

ঢাকা মিরপুর-১ এলাকায় জনৈক ব্যক্তির কাছে টাকা পাবে বলে গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বিপ্লব তার বাবাকে জানিয়ে মিরপুরের উদ্দেশে যান। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ না ফেরায় এবং বিপ্লবের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় বিপ্লবের বাবা রাতেই আদাবর থানায় ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাত একটার দিকে বিপ্লবের মোবাইল ফোন নম্বরের অবস্থান সিরাজগঞ্জ বলে জানা যায়।

বুধবার বিপ্লবের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন স্বামীর খোঁজে সিরাজগঞ্জ থানায় যান। সেখানে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপ্লবের অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ বলে জানতে পারেন। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পীরগঞ্জ থানা পুলিশ বিপ্লবকে খোঁজা শুরু করেন। এরমধ্যে বিপ্লবের চোখ ও হাতা-পা বাঁধা ছবি এবং একটি ভিডিও তার মেসেঞ্জার আইডি থেকে স্ত্রী ফারহানার মোবাইলের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠানো হয়। এরপর এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বিপ্লবের মোবাইল নম্বর থেকে তার স্ত্রী ফারহানার নম্বরে মেসেজ আসে।

পরে বিষয়টি ফারহানা পুলিশকে জানান। এ অবস্থায় থানা পুলিশ ও ফারহানার পরিবারের লোকজন বিপ্লবকে খুঁজতে থাকে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফারহানা জানতে পারেন, তার স্বামী বিপ্লবকে পীরগঞ্জ পৌর শহরের শহিদ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সড়কে রিফাত ট্রেডার্স নামে একটি পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুমে দেখা গেছে। পরে থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায় এবং মোটরসাইকেল সার্ভিসিং রুম তল্লাশি করে বিপ্লবকে বাঁধার নাইলনের রশি, কাপড়ের টুকরা ও একটি চেয়ার জব্দ করে। 

এ সময় থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মোটরসাইকেল শোরুমের কর্মচারী মাসুম ও সুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে মূলত স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্যই ওই পুরাতন মোটরসাইকেল শোরুমের সার্ভিসিং কক্ষে বিপ্লবের পরামর্শে অপহরণ নাটক সাজানো হয়। এ ঘটনায় ফারহানা ইয়াসমিন বাদী হয়ে স্বামী বিপ্লব, মোটরসাইকেল শোরুমের কর্মচারী মাসুম ও সুমন এবং ভাকুড়া গ্রামের আমিনুল ইসলামকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাঠক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপহরণকারী নিজেই এই নাটক সাজিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে এ নাটক সাজান। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সাজানো সেই নাটকের রহস্য উদঘাটন ও অপহরণ নাটকের আলামত জব্দ করে। পরে তাদের দুইজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

আরিফ হাসান/এএএ