লঞ্চডুবির ঘটনার দুদিন পর ছোট ছেলে আকাশেরও মরদেহ পেয়েছেন হারাধন সাহা

লঞ্চডুবির ঘটনার দুদিন পর ছোট ছেলে আকাশেরও (১২) মরদেহ পেয়েছেন হারাধন সাহা। এর আগে স্ত্রী ও বড় সন্তানের মরদেহ পেয়েছিলেন। মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) বিকেলে আকাশকে মুন্সিগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্মশানে দাহ করা হয়। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত আকাশ।

দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে শহরের মালপাড়ায় বসবাস করতেন হারাধন। লঞ্চডুবির ঘটনায় হারালেন পুরো পরিবার। এখন তিনি নিঃস্ব।

আকাশকে চোখের ডাক্তার দেখাতে রোববার (০৪ এপ্রিল) ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান মা সুনিতা সাহা (৪০)। সঙ্গে ছিল বড় ছেলে ​বিকাশ সাহা (২২)।

ডাক্তার দেখিয়ে সাবিত আল হাসান লঞ্চে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ হন তারা। ঘটনার দিন রাতে সুনিতা সাহার মরদেহ পাওয়া যায়। বিকাশের মরদেহ পাওয়া যায় সোমবার সন্ধায়। আকাশের মরদেহ পাওয়া যায় মঙ্গলবার দুপুরে।

কাঁদতে কাঁদতে হারাধন সাহা বলেন, দুই রাত জেগে থাকার পর আজ ছোট ছেলের মরদেহ নদীতে ভেসে ওঠে। পরে উদ্ধারকারীরা মরদেহ বুঝিয়ে দেয়। আমার পুরো পরিবার একসঙ্গে গেল।

তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জে ছোট ছোট লঞ্চগুলো চলে। এগুলো অনেক পুরাতন। রং করে নতুন করে চালায়। এসব লঞ্চ দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ডুবে যায়। আমি সব হারিয়েছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এসব ছোট লঞ্চ মুন্সিগঞ্জে যাতে না চলে। আমার মতো আর কেউ যেন স্বজনহারা না হয়।

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবির ঘটনায় একে একে মুন্সিগঞ্জে পৌঁছেছে ২২ জনের মরদেহ। আর কেউ নিখোঁজের তালিকায় নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

দুদিন ধরে একেকটি মরদেহ আসার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে মুন্সিগঞ্জের আকাশ-বাতাস। পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। মৃতরা সদর উপজেলার মালপাড়া, মোল্লাকান্দি, দেওভোগ, চরকেওয়ার, দক্ষিণকোর্ট, দক্ষিণ চরমশুরা এলাকার বাসিন্দা।

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজের তালিকায় আর কেউ নেই। ৩৪ জনের মধ্যে ২২ জনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। এদের ১২ জন নারী, নয়জন পুরুষ ও এক বছরের কন্যাশিশু রয়েছে। নিহত ২২ জনের বাড়ি সদর উপজেলায়। প্রত্যেকের মরদেহ স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার নুরাইতলী গ্রামের মুখলেছ সেখের মেয়ে রুনা আক্তার (২৪), মোল্লাকান্দি গ্রামের সুমর আলীর বেপারীর ছেলে সোলামান বেপারী (৬৫), তার স্ত্রী বেবি বেগম (৬০), মালপাড়া গ্রামের হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০), তার ছেলে বিকাশ সাহা (২২), আকাশ সাহা (১২), উত্তর চরমশুরা গ্রামের ওলিউল্লাহর স্ত্রী পাখিনা (৪৫), আরিফের স্ত্রী বীথি (১৮), মেয়ে আরিফা (১), মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রতিমা শর্মা (৫৩), চর মোল্লাকান্দি গ্রামের শামসুদ্দিন (৯০), রেহেনা বেগম (৬৫), সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা গ্রামের জাকির (৪৫), সদর উপজেলার দক্ষিণ কেরয়ার গ্রামের গোবিন্দ্র চন্দ্র দাশের ছেলে নারায়ণ দাস (৬৫), তার স্ত্রী পারবতী দাস (৫০), মালপাড়া গ্রামের সিরাজের মেয়ে রিজভী (২০), নয়াগাঁও গ্রামের মিঠুনের স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), মধ্য কোর্টগাঁও গ্রামের মতিউর রহমান ফরাজির ছেলে ইউসুফ কাজি, রিকাবি বাজার এলাকার মুশকে আলম মৃধার ছেলে শাহ আলম মৃধা (৫৫), টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেতকা গ্রামের মুছা সেখের ছেলে জাকির হোসেন (২৫) ও সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর গ্রামের মো. নুরুল আমিনেরর ছেলে তানভীর হোসেন হৃদয়।

রোববার (০৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ কয়লাঘাট এলাকায় এসকে-৩ নামে একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটির অধিকাংশ যাত্রীই ছিল মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা। 

সোমবার (০৫ এপ্রিল) বিকেলে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা পর্যন্ত ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং লঞ্চটি টেনে তোলা হয়। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আরও পাঁচজনের মরদেহ ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। 

ব.ম শামীম/এএম