গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটি এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। অপরিকল্পিতভাবে প্রায় অর্ধযুগ আগে নির্মাণ করা এই সেতুতে এখন উঠতে ব্যবহার করতে হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। ফলে চার গ্রামের হাজারো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে এটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিসের কাজ। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস বলছে এটি এলজিইডি করতে পারে। দুই দপ্তরের ঠেলাঠেলিতে দীর্ঘদিনেও সেতুটির সংস্কারসহ সংযোগ সড়ক করা সম্ভব হয়নি।

সেতুটির অবস্থান গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দির চরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি গ্রামের সঙ্গে বাজে ফুলছড়ি, ফুলছড়ি নৌঘাটিসহ অন্তত চারটি গ্রামের সংযোগ রক্ষা করতে খালের ওপর প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনোমতে সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে লোকজন চলাচল করছে।

স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের পর দুই পাশের সংযোগ সড়ক তৈরির আগেই বন্যা হয়। পরে সেই থেকে সংযোগ সড়ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরপর স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সেতুর দুই পাশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। প্রায় অর্ধযুগ ধরে সেই সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে চার গ্রামের হাজারো মানুষ।

টেংরাকান্দি এলাকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, এই পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেক মানুষ চলাচল করে বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরাও এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। সেতুটির সংস্কারসহ দুই পাশে সংযোগ সড়ক করা হলে হাজারো মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। 

পূর্ব ট্যাংরা কান্দি নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাজাহান প্রামানিক বলেন, এই ব্রিজটি জনগণের কোনো উপকারে আসেনি। এখন এই এলাকার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা ও বয়স্ক মানুষদের চলাচলে ব্যাপক অসুবিধা হয়। দ্রুত এই সেতুটির সংস্কার করার দাবি জানাই। 

এ ব্যাপারে ফুলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সইরুদ্দিন বলেন, যতদূর মনে পড়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ করেছিল পিআইও অফিস। নির্মাণের পর থেকে সংযোগ সড়কের অভাবে কোনো যানবাহন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারেনি। পরে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সাঁকো তৈরি করে কোনোমতে হেঁটে চলাচল করে আসছে। এলাকার মানুষের সীমাহীন এই দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে ব্রিজটি পূর্ণ নির্মাণের দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।

ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শহীদুজ্জামান বলেন, ওই সব ফুটওভার সেতু আমরা করি না। সেতুটি আমাদের নয়। ওটা এলজিইডির হতে পারে। তারপরেও আমার সহকারী ইন্জিনিয়ার মিজান এখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

ফুলছড়ি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় মোবাইল ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস্তামুল হক বলেন, সেতুটি আমরা করিনি। সেতুর নির্মাণ কাজের সময় আমি ছিলাম না। উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার বলার পর আমি সেতুটি দেখতে যাই। তবে দেখে মনে হয়েছে এটি আমাদের (এলজিইডি) কোনো প্রকল্পে নয়। হয়ত অন্যকোনো ফান্ড থেকে কেউ করতে পারে। সেটা পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) করতে পারে, আবার এলজিইডি করতে পারে।

তথ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেতুটি কবে নির্মাণ হয়েছে সেটি জানি না। অনেক ফাইল অডিট হয়ে গেলে বেশিদিনের পুরোনো ফাইল সংরক্ষণ করা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা একটা প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে বীজটি নতুন করে কাজ করা হবে। 

রিপন আকন্দ/এএএ