মেয়ে ভূমিকা রানি শীলের সঙ্গে রত্মা রানি শীল

একমাত্র সন্তান ভূমিকা রানি শীলকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই চলছিল রত্মা রানি শীলের সংসার। কিন্তু আকস্মিক ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী ভুবন চন্দ্র শীলকে হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রত্মা রানি শীল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রত্মা রানি শীল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮-৯ দিন পর্যন্ত কাকুতি-মিনতি করে সরকারের কাছে অনেক আবেদন করেছি। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি। না পেয়েছি চিকিৎসার জন্য কোনো সু-ব্যবস্থা বা টাকা-পয়সা। না পেয়েছি এ অসহায় পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ানোর মতো কাউকে। এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের যদি একটু দয়া হয়, তাহলে একটু সহযোগিতা করবে। সহযোগিতা পেলে আমি মেয়েটাকে নিয়ে বাঁচতে পারব।

তিনি আরও বলেন, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূত্রে আমি সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েকে নিয়ে নোয়াখালীর মাইজদীতে বসবাস করতাম। কর্মস্থল ভিন্ন হওয়ায় আমার স্বামী ঢাকায় থাকতেন। শারীরিকভাবে আমিও অসুস্থ। কিছুদিন আগেও চিকিৎসার জন্য উনি আমাকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন। চলতি মাসের ৩০ তারিখ আবার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিয়তি এখন আমাদের কাছ থেকে উনাকেই নিয়ে গেছেন।

স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা রত্মার চোখের জল যেন কোনোভাবে মানছে না। সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও রাজ্যের হতাশা ভর করেছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রত্মার মাথায়।

ভুবন চন্দ্র শীলের সঙ্গে মেয়ে ভূমিকা রানি শীল ও স্ত্রী রত্মা রানি শীল 

ভুবন চন্দ্র শীলের এক স্বজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন বিচার চেয়েও লাভ নেই। আজকে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে দৃশ্যমান কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পায়নি। এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি একটু পাশে দাঁড়ায় মেয়েটার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।

বাবাকে হারিয়ে নির্বাক মেয়ে ভূমিকা রানি শীল। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সরকার বা কেউ যদি সাহায্য করে অনেক উপকার হবে। কিন্তু এতদিন ধরে কাউকে পাশে পাইনি, আর আশা কীভাবে করি। যদি কেউ পাশে দাঁড়ায় আমি সুন্দরভাবে পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারব। বাবারও অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে পড়ালেখা করানোর।

একইভাবে ৭৫ বছর বয়সী মা গিরিবালা শীলও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ।

উল্লেখ্য, ভুবন চন্দ্র শীল ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের নোয়াপুর গ্রামের সন্তান। গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে গ্রামের বাড়িতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এদিন সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় এক সন্ত্রাসীকে উদ্দেশ্যে করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। সেই গুলি এসে মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীলের মাথায় লাগে। সাত দিন হাসপাতালে অচেতন থেকে গত সোমবার প্রাণ হারান ভুবন।

এমজেইউ