বাগেরহাটের কচুয়ার বিসি ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮টি তালা ভেঙে  শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের  ১৯টি ল্যাপটপ চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার তিন মাস পরে মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কচুয়া থানায় মামলা করেন। 

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কচুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন হোসেন।

প্রধান শিক্ষক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৫ জুন রাতের কোনো বিদ্যালয়ের  ৮টি তালা ভেঙে অজ্ঞাত চোরেরা ল্যাবের ১৭টি এবং শিক্ষকদের ব্যবহৃত ২টিসহ মোট ১৯টি ল্যাপটপ নিয়ে যায়।

সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতো ২৫ জুন রাতে বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ফয়জুল হক বিদ্যালয় পাহাড়ার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ওই রাতের কোনো এক সময় প্রতিষ্ঠানের  ৮টি তালা ভেঙে চোরেরা কৌশলে ল্যাবের ১৭টি ল্যাপটপ ও শিক্ষকদের ব্যবহৃত ২টি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। পরদিন ২৬  জুন সকালে নৈশপ্রহরী ল্যাব এবং ভবনের তালা ভাঙ্গা দেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায় কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে ২৬ জুন রাতে থানায় বসে নৈশপ্রহরীকে আটটি ল্যাপটপ ও ল্যাব সহকারীকে পাঁচটি ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন। নৈশপ্রহরী বাধ্য হয়ে জমি এবং গরু বিক্রি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ৮টি ল্যাপটপ কিনে দেন। 

তবে ল্যাপটপ চুরির বিষয়টি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা প্রশাসনের শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগ, এবং কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউকেই জানায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার ২ মাস ২০ মাস পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। এ ঘটনায় ১৬ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাগেরহাট কার্যালয়ের প্রোগ্রামার মো. শরিফুল ইসলাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। 

এদিকে দায়িত্বে অবহেলা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি গোপন রাখার অপরাধে বিসি ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম এবং প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম ছায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, চুরির বিষয়টি গোপন রেখে কর্তৃপক্ষকে না জানানোয় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বিসি ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নৈশপ্রহরী ফয়জুল হক বলেন, আমি ঘুম ছিলাম এটা সত্য। কিন্তু এই চুরির সাথে আমি জড়িত না। শুধু মাত্র চাকুরী টিকিয়ে রাখতে শেষ সম্বল জমি এবং গরু বিক্রি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ৮টি ল্যাপটপ কিনে দিতে বাধ্য হয়েছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায় বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইফুল ইসলামের  সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৈশপ্রহরী ও ল্যাব সহকারীর কাছ থেকে ল্যাপটপ কেনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে  বিষয়টি গোপন রাখা কেন হয়েছিল- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চুরির বিষয়টি গোপন রাখতে বলিনি। মামলা হয়েছে। মামলায় চুরির ঘটনা উদ্ঘাটন হবে।

কচুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন হোসেন বলেন, ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় মামলা করেছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আশা করি চুরির ঘটনা উদ্ঘাটন করতে পারব।

 শেখ আবু তালেব/আরএআর