জীবিকার খোঁজে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় এসেছিলেন তারা। এখন ফিরে যাচ্ছেন লাশ হয়ে। ফেনীর ছাগলনাইয়ায় সেপটিক ট্যাংকে নেমে মারা যাওয়া দুই নির্মাণ শ্রমিকের অর্ধগলিত মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন তার স্বজনরা। রোববার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের মরদেহ বুঝে দেওয়া হয়।

এসময় তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে জানান, মর্মান্তিক এ ঘটনায় ভবন মালিক পক্ষ বা ঠিকাদার কেউই কোনো সহযোগিতা করেনি। ময়নাতদন্তের খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয়েছে অসহায় দুই পরিবারকে। 

মৃত দুইজন হলেন, বাগেরহাটের কচুয়া থানার সাংদিয়া গ্রামের রবীন্দ্র দাসের ছেলে বিকাশ চন্দ্র দাস আকাশ (৩৫), খাগড়াছড়ির রামগড় থানার রামগড় করইয়া বাগান এলাকার ছেরাজুল হকের ছেলে মাইন উদ্দিন (২৫)।

আরও পড়ুন : সেপটিক ট্যাংকে নেমে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

মৃত মাইন উদ্দিনের বৃদ্ধ বাবা ছেরাজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেটা কাজ করতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। সে শুক্রবার নিখোঁজ হয়। শনিবার তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। মরদেহ হাসপাতালে আনার পর থেকে কেউই আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি। ময়নাতদন্তের কাজ শেষে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অনেক কষ্টে টাকাটা জোগাড় করেছি। 

মাইন উদ্দিনের মতো একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মৃত আরেক শ্রমিক বিকাশ চন্দ্র আকাশের স্বজনরাও।

এর আগে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ছাগলনাইয়া পৌরসভার থানা পাড়া এলাকায় কুয়েত প্রবাসী শহিদুলের নির্মাণাধীন বাড়িতে সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে ওই দুই শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই মাস আগে ওই এলাকার শহিদুলের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। শুক্রবার ওই সেপটিক ট্যাংকের ভেতরের বাঁশ কাঠসহ নির্মাণসামগ্রী খুলতে নামেন আকাশ ও মাইন উদ্দিন। এরপর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শ্রমিকদের স্বজনরা ঠিকাদারকে বিষয়টি জানায়। পরে শনিবার সকালে ঠিকাদার ঘটনাস্থলে গিয়ে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে। 

ছাগলনাইয়া ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মিরাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সেপটিক ট্যাংকের ভেতর জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

তারেক চৌধুরী/আরকে