চা বিক্রেতা দোলোয়ার হোসেন

জন্মের আট মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খেয়েছেন। তারপর বাড়তি খাবার দিলে বমি করে ফেলে দিতেন। ছেলেকে বাড়তি খাবার খাওয়াতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েন মা-বাবা। এর মধ্যে একদিন ময়দা দিয়ে চাপটি পিঠা বানিয়ে দেন মা। চাপটি থেকে শুরু হয় রুটি খাওয়া। ৪৯ বছর ধরে রুটি খেয়ে দিন পার করছেন চা বিক্রেতা দোলোয়ার হোসেন। কোনোদিন যেতে হয়নি ডাক্তারের কাছে।   

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চরগড়পাড়া গ্রামের মৃত রহম আলী বেপারীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন। জন্মের পর থেকে আটার রুটি খেয়ে জীবনযাপন করছেন। আজ পর্যন্ত ভাত খাননি। ভাত-মাছের স্বাদ কেমন জানেন না। নিজগ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামের মানুষ তার এ জীবনযাপন দেখে বিস্মিত। তিন বেলা রুটি খেয়ে এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় তার জীবন্ত উদাহরণ দেলোয়ার। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য।

দেলোয়ারের মা টগরজান বেগমের কাছে ছেলের রুটি খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জন্মের পর থেকে দেলোয়ার আট মাস পর্যন্ত শুধু দুধ খেয়েছে। দুধের পাশাপাশি ভাত, খিচুড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। কখনো খায়নি। জোর করে খাওয়ালে বমি করে ফেলে দিত। দুধ ছাড়া অন্য খাবার না খাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। পরে গণক ঠাকুরের কাছে নিয়ে গেলে বলেন, দেলোয়ার ভাত খাইবে না। এটা তার ইচ্ছারোগ। খাইলে খাইতেও পারে; আবার নাও পারে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত দেলোয়ার রুটিই খায়। ৪৯ বছরে একমুঠো ভাত খায়নি।

দেলোয়ারের চাচা আব্দুল জলিল মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেলোয়ার রুটি খাওয়ার অভ্যাস করেছে। ভাতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়নি কখনো। তাকে পরীক্ষার করার জন্য রুটির ভেতরে ভাত দিত চাচিরা। এরপরও খাওয়াতে পারেনি। অবাক করা বিষয় হলো আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের অসুখে পড়েনি দেলোয়ার। কোনোদিন ডাক্তারের কাছেও নিতে হয়নি।

জন্মের পর থেকে আটার রুটি খেয়ে জীবনযাপন করছেন, আজ পর্যন্ত ভাত খাননি

দেলোয়ারের স্ত্রী শিউলি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০ বছর আগে দেলোয়ারের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল। আমি অনেক চেষ্টা করেছি; রুটির বদলে অন্য খাবার খাওয়ানোর। পারিনি। রুটি ছাড়া কিছুই খাওয়াতে পারলাম না। তাই রুটিই বানিয়ে দিই, তিন বেলা খান। আমাগো যেমন ভাত না খাইলে ভালো লাগে না, তার রুটি না খাইলে ভালো লাগে না।

দোলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জন্মের পর কয়েক মাস মায়ের দুধ খেয়েছি। অনেক চেষ্টা করেও ভাত খাওয়াতে পারেননি বাবা-মা। আমি চালের তৈরি কিছু খেলে বমি হয়। পরে আটা দিয়ে চাপটি পিঠা বানিয়ে দেন মা। চাপটি থেকে শুরু হয় রুটি খাওয়া। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত রুটি খেয়েই আছি। কখনো রুটি ছাড়া ভাত-মাছ খেতে ইচ্ছা হয়নি। ৪৯ বছর ধরে তিন বেলা আটার রুটি খেয়ে সুস্থ আছি। কোনোদিন কোনো ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়নি। ডাক্তারের কাছেও যাইনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট চিকিৎসক রাজীব বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চা বিক্রেতা দেলোয়ার রুটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ভাত আর রুটি দুটোই শর্করা খাবার। তবে শরীরে হালকা রক্তশূন্যতা থাকতে পারে। তাতে শারীরিকভাবে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা নেই তার। তবে রুটি খাওয়ার বিষয়টি তার অভ্যাস।

এএম