গাজীপুরে ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার
গাজীপুরে পৃথক ঘটনায় গত ২৪ ঘণ্টায় অটোচালকসহ চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) জেলার পৃথক জায়গা থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে বাসন থানা এলাকা থেকে এক অটোরিকশা চালকের, সকালে সদর থানাধীন মাস্টার বাড়ি এলাকায় একটি মোবাইল দোকানে টিন কেটে চুরি করার সময় এক যুবক ও বুধবার সকালে এবং সন্ধ্যায় গাছা থানার এলাকার থেকে পৃথক ঘটনায় দুই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
গাজীপুর মেট্টোপলিটন সদর থানার মাস্টারবাড়ি এলাকার একটি দোকানের টিনের চাল থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে। দোকানের টিন কেটে চুরি করতে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন জানান, দোকানের চালের কিছু অংশ কাটা এবং লাশের পাশে টিন কাটার কাঁচি ও প্লাস পড়ে ছিল। যুবকের দেহের কিছু অংশ চালের কাটা অংশের ভেতর ছিল। ধারণা করা হচ্ছে চালের টিন কেটে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই যুবক মারা গেছেন। নিহত যুবক মো. রাসেল (৩০), সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার চালা অফিস পাড়া এলাকার মো. আকবরের ছেলে। যুবকের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কাজ চলছে। রাসেলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দোকানের মালিক মো. সোলায়মান জানান, পাশের বহুতল ভবন থেকে দোকানের চালে কেউ চুরি করছে এমন তথ্য জানালে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে এক যুবকের মরদেহ দেখতে পাই। পরে পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করেছে।
এদিকে, গাজীপুর মহানগরের বাসন থানা এলাকায় অটোরিকশার চালককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুর মহানগরের সার্ডিরোড এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোররাত আনুমানিক পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুর ইসলাম (৪৫) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাকারকান্দা গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে।
নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নূর ইসলাম গাজীপুরের চান্দনা বউবাজার এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে অটোরিকশা চালাতেন। অতিরিক্ত আয় করতে গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ভাড়া বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হন। রাত ১ থেকে ভোর ৫টার মধ্যে কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা তাকে তার বুকে ও কানের কাছে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পরে মরদেহ ফেলে রেখে তার অটোরিকশাটি লুট করে নিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে স্থানীয়রা গাজীপুরের সার্ডিরোড এলাকায় রাস্তার পাশে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইকারীরা তার আটোরিকশা ছিনিয়ে নিতেই তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অপরদিকে, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের গাছা থানা এলাকা থেকে বুধবার সকালে নাদিয়া আক্তার (১০) ও সন্ধ্যায় সুমাইয়া খাতুন (১৫) নামের দুই কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কিশোরী সুমাইয়া খাতুন (১৫) পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পৌতখালি এলাকার মোস্তফা আকন্দদের মেয়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে গাছা থানাধীন বটতলা এলাকায় বসবাস করতো সুমাইয়া খাতুন (১৫)। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
নিহত সুমাইয়ার বড় ভাই সোহাগ হোসেন বলেন, আমি গ্রামে থাকলেও মা-বাবার সঙ্গে সুমাইয়া গাজীপুরে থাকতো। আমার ছোট বোন খুবই আদরের ও অনেক ভালো ছাত্রী ছিল। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো সুমাইয়া। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে সে আত্মহত্যা করে। তবে কেন সে ফাঁস নিলো তা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না।
নিহত অপর কিশোরী কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থানার আ. সালামের মেয়ে নাদিয়া আক্তার (১০)। সে মহানগরীর হারিকেন এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে স্থানীয় সোহেলের বাসায় ভাড়া থেকে পার্শ্ববর্তী নুরানি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতো। নিহত নাদিয়ার বাবা আ. সালাম বলেন, আমি ঢাকায় মাছ ব্যবসা করি। মেয়ে আমার স্থানীয় একটি নুরানি মাদ্রাসায় পড়তো। গতকাল বুধবার সকালে ওর মা ভাড়া বাড়ির কক্ষের দরজা খুলতে গেলে ভেতর থেকে দরজা লাগানো অবস্থায় দেখতে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ও বাড়ির লোকজন দরজা খুলে গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এত ছোট মেয়ে কেন আত্মহত্যা করবে আমরা তা ভেবে পাচ্ছি না।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন জানান, নিহত দুই কিশোরীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিহাব খান/এএএ