জন্মের পর থেকেই দু-চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও ময়লা জমে দু-চোখ বন্ধ হয়ে যায়। দরিদ্রতা আর অর্থের অভাবে চোখের সঠিক চিকিৎসা করাতে না পেরে চিরতরে অন্ধ হতে চলেছে ৬ বছরের শিশু সৈকত। তার চোখের আলো ধরে রাখতে প্রয়োজন দ্রুততম সময়ে উন্নত চিকিৎসা। এতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অথচ নিরাপত্তা প্রহরী পিতা ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা মায়ের সেরকম সামর্থ্য নেই। এ অবস্থায় সৈকতের দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখতে আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। শিশু সন্তানকে অন্ধত্ব থেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন অসহায় পরিবারটি।

সৈকত সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সয়াধানগড়া মহল্লার উজ্জ্বল হোসেন ও সালমা বেগম দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে। সৈকতের চেয়ে দুই বছরের বড় তার আরেকটি ভাই রয়েছে।

সৈকতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই সৈকতের (৬) দু-চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও ময়লা জমে থাকে। তাকে প্রথমে সিরাজগঞ্জের চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিএনএলডি (লিআইএফ) নামে একটি রোগ শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে শিশু সৈকতের একটি চোখের অস্ত্রোপচারের পরও শিশুটির চোখটি ভালো হয়নি।

এরপর নিরুপায় অসহায় পরিবারটি ঢাকা থেকে ফিরে এসে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় অবস্থিত বাহেলা খাতুন চক্ষু ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। সেখানকার চিকিৎসকরা সৈকতকে আবারও ঢাকার ফার্মগেটের ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দুটি চোখের অপারেশন সম্পন্ন করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার বেশি খরচ হবে বলে জানান চিকিৎসকেরা। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে সন্তানকে ফিরিয়েি নিয়ে আসেন বাড়িতে। শিশুর এমন অবস্থায় গৃহপরিচারিকা মা ও নিরাপত্তা প্রহরী বাবা যেন চোখের সামনে সন্তানের চোখ অন্ধ হতে দেখছেন।  

শিশুটির মা সালমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে সৈকতের বয়স ৬ বছর। আমার ছেলের জন্মগতভাবেই চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। জন্মের পর থেকেই তার চিকিৎসা করতে করতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয়ভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এই চিকিৎসায়ও কোনো উন্নতি দেখছি না। এখন চোখের সামনেই আমার ছেলে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমরা কিছুই করতে পারছি না। এর চেয়ে একজন মায়ের কষ্টের কি থাকতে পারে? তাই প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের আমার সন্তানের চোখের আলো ধরে রাখতে সাহায্য চাই।

ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার চোখের দৃষ্টি ফিরে আনতে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। এই চিকিৎসায় ব্যয় হবে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মতো। যেহেতু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না তাই এ অবস্থায় অন্যদের সাহায্য ছাড়া সৈকতের চোখের চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ৬টি রোগের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দিয়ে থাকি। কিন্তু চোখের সমস্যা এর মধ্যে পড়ে না। তবে ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আমাদের একটা সমাজ সেবা অফিস আছে। সেখানে গেলে কিছুটা সহযোগিতা তারা পেতে পারে।

সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে এই বিষয়ে আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। সরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা চললেও হয়ত আমরা কিছু করতে পারতাম। তারপরও তাদেরকে একটা আবেদন জমা দিতে বলেন। দেখি আমি তাদের জন্য কতটুকু কী করতে পারি।

শুভ কুমার ঘোষ/এএএ