বগুড়ার শাজাহানপুরের আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে এই ঘরগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। গৃহের বাসিন্দারা বলছেন, হস্তান্তরের পর থেকেই এমন অবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় আশ্রয়ণের ঘরগুলো।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নে পলিপাড়ায় পাশে খাসজমিতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা প্রকল্পের অর্থায়নে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে গৃহহীন ৯টি পরিবারের জন্য দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব ঘর তৈরি করা হয়। ঘরগুলো তৈরির পর ২০২১ সালে গৃহহীনদের মাঝে সেগুলো হস্তান্তর করে সরকার।

কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই স্থানটি অত্যন্ত নীচু। ঘরগুলো নির্মাণও করা হয় সড়ক থেকে প্রায় চার ফুট নিচে। তাদের চলাচলের জন্য রাস্তাও ছিল না। এ জন্য বর্ষাকাল কিংবা ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঘরগুলো। নীচু হওয়ায় ঘর নির্মাণের আগে থেকেই স্থানীয়রা বিষয়টি জানিয়েছিল প্রশাসনকে। কিন্তু সেই সময় বিষয়টি আমলে নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

পরবর্তীতে এ নিয়ে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে ধরনা দেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। এর প্রেক্ষিতে গত বছর প্রকল্প স্থানের মাটি কেটে চলাচলের রাস্তা উঁচু করা হয়। কিন্তু এতে আরও বিপাকে পড়েন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বাসিন্দারা। বৃষ্টি বা আশেপাশের ঢলের পানি এসে জমতে থাকে তাদের ঘরে।

শনিবার দুপুরে মানিকদিপার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো ঘর পানিতে ডুবে আছে। শুধু টিনের চালা ও ঘরের জানালা টুকু বোঝা যায়। কিন্তু মেঝে দেখা যায়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর সামনের কালভার্টের ওপর কয়েকজন মাছ ধরছিলেন। তারা জানালেন, ওখানে গিয়ে লাভ নেই। বৃষ্টির পানি জমতে দেখেই সবাই ঘর ছেড়ে চলে গেছেন।

একই এলাকার মো. ফারুক বলেন, প্রকল্পের বাসিন্দারা সবাই কারও বাসায় বা অন্য গ্রামে চলে গেছে। তিন চার দিন হচ্ছে তারা ঘর ছেড়েছে। থাকবেই বা কীভাবে, ঘরের মধ্যে এক কোমর করে পানি।

খোঁজ নিয়ে হেলেনা নামে এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তিনি তার মায়ের বরাদ্দ পাওয়া পাশের আরেকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে অবস্থান নিয়েছেন। ৩০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, তিন বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছি। তখন থেকেই দেখছি পানি এলেই ঘর ডুবে যায়। গত বছর মাটি কাটার কারণে আরও বেশি পানি ঢুকছে ঘরের মধ্যে।

হেলেনা জানান, ঘরের জানালা পর্যন্ত পানি থাকে। বারান্দায় বসা যায় না। রান্না করা যায় না। অন্য প্রতিবেশীরা আশেপাশের যার যেখানে আত্মীয়-স্বজন আছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

মোছা. ফাহিমা নামে এক বাসিন্দা বলেন, তিন মাস হলো ঘর পেয়ে এখানে উঠেছি। রাস্তায় চলাচল করতে সমস্যা হয়। ১৫ ঘর মিলে টিউবওয়েল দিয়েছে দুটি। এগুলো নিয়ে সবার সঙ্গে ঝগড়া বাধে।

এদিন সাড়ে ১০টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলায় ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। এ কর্মসূচিতে আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পানিবন্দি ৯ পরিবার ও বামুনিয়া চাঁদবাড়িয়া গ্রামের ১১ পরিবারের মাঝে ত্রাণ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদা খানম বলেন, এই ঘরগুলো (বামুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প) পাকা রাস্তার সঙ্গেই বানানো হয়েছে। তাছাড়া এটা তেমন কোনো নীচু জমিও নয়। অতিরিক্ত পানির কারণে বারান্দার নিচে পানি আসলেও ঘরে উঠেনি।

আর মানিকদিপার বিষয়ে তিনি জানান, আপাতত সেখানে উঁচু করার কোনো পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ইউএনও সাহেবকে নির্দেশ দিয়েছি। কোথায় কোথায় পানির ফ্লো নেই, সেটা শনাক্ত করার জন্য। তারপর আমরা পানি নিঃসরণ করার ব্যবস্থা করবো।

এএএ