পোস্টার ছেঁড়ায় ক্রাচ দিয়ে প্রতিবন্ধীকে পেটালেন যুবলীগ নেতা
গাজীপুরের সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে নেতাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলায় এক প্রতিবন্ধীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। বুধবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী লিটনের (৪০) বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তিনি ঘটনার সময় ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। অভিযুক্ত নেতা সোহেল রানা সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকায় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তিনি ওই এলাকার মৃত আলমের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘুরাফেরা করেন। বাজারের লোকজনের দেওয়া খাবার খেয়ে তার দিন চলে।
বুধবার সন্ধ্যায় লিটনকে সামনে পেয়ে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা লিটনের কাঠের তৈরি ক্রাচটি কেড়ে নেন। এতে লিটন মাটিতে পড়ে যান। এরপর সোহেল রানা সেই ক্রাচ দিয়ে লিটনকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রাচে ভর দিয়ে সড়ক চলাচল করছিলেন লিটন। এসময় ওই যুবলীগ নেতা দৌড়ে এসে লিটনকে বকাঝকা শুরু করে। পরে লিটনের হাতে থাকা কাঠের ক্রাচটি কেড়ে নিলে তিনি সড়কের ওপর পড়ে যান। এ অবস্থায় ক্রাচটি দিয়ে যুবলীগ নেতা লিটনকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। এসময় স্থানীয় এক ব্যক্তি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ক্ষিপ্ত সোহেল আরও কিছুক্ষণ লিটনকে পিটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সোহেল রানা বলেন, ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত। সে চুরিসহ এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এর আগে সে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতার ছবি সম্বলিত সাটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এ বিষয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, এক ব্যক্তির কথায় সে পোস্টার ছিঁড়েছে। পরে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। তখন আমি লিটনকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে আমি লিটনের সামনে পড়লে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে। তুই আমাকে মেরেছিস বলে আমাকে হুমকি দেয়। পরে আমি তাকে কয়েকটা মেরে ছেড়ে দিয়েছি।
এই যুবলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, লিটন অনেক খারাপ প্রকৃতির লোক। বেশ কিছুদিন আগে সে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে তার পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়। এতে তার একটি কেটে ফেলতে হয়। এখন সে লাঠি ভর দিয়ে চলে।
ঘটনার বিষয়ে গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এসএম আলতাফ হোসেন বলেন, গাজীপুরের সদর উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়েছি। তাই বর্তমানে প্রচার সম্পাদক পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সোহেল হয়তো ভেঙে দেওয়া কমিটির পরিচয় দিয়ে চলেছেন। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহতাব উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সারোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিহাব খান/আরকে