জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও তার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা অর্জন করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। বয়স ১২ বছর হলেও শারীরিক গঠন তেমন বৃদ্ধি হয়নি। উচ্চতা মাত্র ২ দশমিক ৬ ফুট। তাই তাকে অনেক সময় উপহাসের শিকার হতে হয়। তবে সে এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তার ইচ্ছে সফল হয়ে পরিবারের হাল ধরার।

বলছিলাম মাদারীপুরের কালকিনির শারীরিক প্রতিবন্ধী ওমর ফারুকের কথা। তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামে। সে ৭ নং উত্তর কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওমর ফারুক পায়ে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করে। পরিবারের অভাবের কারণে তিন বেলা খাবার জোটাই দায়। বাবা একদিন কাজে না গেলে তাদেরকে অনেকটা অনাহারেই দিন কাটাতে হয়। তবে ফারুকের স্বপ্ন সে পড়াশোনা শেষে পরিবারের হাল ধরবে। তার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের সুজন হাওলাদার ও রহিমা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে ওমর ফারুক সবার বড়। তার বাবা রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করেন। বাবার উপার্জনে টেনেটুনে কোনোমতে সংসার চলে। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ। সুস্থ থাকলে কাজ করতে পারে। নাহলে কাজে যেতে পারেন না। এভাবেই কোনোমতে চলছে তার পরিবার। 

ওমর ফারুক বলেন, আমার চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। জোরে হাঁটলে পা ব্যথা করে, তারপরও ভোরে ঘুম থেকে উঠে মসজিদের মক্তবে যাই পরে সেখান থেকে এসে আবারও হেঁটে স্কুলে যাই। আমার বাবা অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। যার ফলে কষ্ট করেই দিন পার করতে হয়। আমি পড়াশোনা করে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই। 

স্থানীয় আমিনুল হাওলাদার বলেন, ওদের পরিবারটা অনেক কষ্ট করে চলে। তারপরও বড় ছেলেটা প্রতিবন্ধী হওয়ায় চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে তবুও ভালো হয়নি। ওর বাবা অসুস্থতার জন্য সবসময় কাজ করতে পারেন না। সরকার কিংবা বিত্তবান কেউ তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে ওমর ফারুক ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।

ওমরের বাবা সুজন হাওলাদার বলেন, ওমর ফারুক শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই এই অবস্থা। বেশিরভাগ মানুষই তাকে খাটো ওমর হিসেবে চেনে। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ওমর ফারুকই বড়। অন্য সন্তানরা স্বাভাবিক হয়েছে। আমার সামান্য উপার্জনে কোনো রকম সংসার চলে। ওর খুব ইচ্ছে পড়াশুনা করে চাকরি করবে। কিন্তু আমার অভাবের সংসারে ওকে ভালো একটা জামাও কিনে দিতে পারি না।একদিন কাজ করতে না পারলে সবাইকে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তবে ওমরের স্বপ্ন সে লেখা পড়া শেষে চাকরি করে আমাদের সুখে রাখবে। তার প্রবল ইচ্ছে আছে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমি গরীব মানুষ তাই ওর দিকে তেমন নজর দিতে পারি না। ওকে ভালো কোনো খাবারও খাওয়াতে পারি না। প্রতিবন্ধী হিসেবে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা ও পাই না। সরকারের কাছে আবেদন যে ওমর তার স্বপ্নটিকে যেন বাস্তবায়ন করতে পারে।

৭ নং উত্তর কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহআলম জানান, ফারুককে আমরা স্কুলে পড়াশোনায় সহায়তা করি। কারণ সবার মতো ওমরের জীবন স্বাভাবিক নয়। আমরা যতটুকু পারি সহযোগিতা করছি। আমরা মনে করি সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে ওমরের জীবন পালটে যেতে পারে।

কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ওমর ফারুকের যেহেতু পড়াশুনার প্রতি মনোযোগ আছে, সে পড়াশুনা করতে চায়। তাই তাকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

রাকিব হাসান/এএএ