কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) গত কয়েক বছরে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের। তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই নারী।  এ ছাড়া রপ্তানি বেড়েছে কয়েকগুণ।

ইপিজেড কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০০ সালে ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা ইপিজেড। বর্তমানে এ ইপিজেডে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। আরও ৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে পণ্য উৎপাদনে। বিদেশি বিনিয়োগে ২৭টি, দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে ১৩টি এবং শুধু দেশীয় বিনিয়োগে চলছে ৮টি প্রতিষ্ঠান। বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও যুক্তরাজ্যসহ মোট ১৪টি দেশ।

এখন পর্যন্ত কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ হয়েছে ৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। গত ৫ বছরের মধ্যে কুমিল্লা ইপিজেডে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ দশমিক শূন্য ৫ মার্কিন ডলার। ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪৯০ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪৬৪ দশমিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।  

রাজধানী ঢাকা ও বন্দর রাজধানী চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ইপিজেডের অবস্থান কাছে হওয়া, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং উন্নত পরিবেশের কারণেই বিদেশি বিনিয়োগ দিনদিন বাড়ছে।

ইপিজেডটিতে পোশাক, ইলেকট্রনিক, ব্রাশ, মেডেল, ফুটওয়্যার, ক্যামেরার কেইস, ব্যাগ, লাগেজ, প্লাস্টিক পণ্য, হেয়ার ও ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিজ, গ্লাভস, পেপার প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন রকমের পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। এ ইপিজেডে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। তবে দেশি শ্রমিকের পাশাপাশি কয়েকশ বিদেশি শ্রমিকও কাজ করছেন কুমিল্লা ইপিজেডে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এই ইপিজেডটিতে।

কুমিল্লা ইপিজেডকে ঢেকে রাখা হয় কঠোর নিরাপত্তার চাদরে। ২৪ ঘণ্টায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউই প্রবেশ করতে পারেন না ইপিজেডের গেইট দিয়ে। ফলে বিনিয়োগে আরও বেশি আকৃষ্ট হন বিদেশিরা।

কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহবুব ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এছাড়াও ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করছে। এই ইপিজেডে যে পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে দেশের অন্য ইপিজেড থেকে এটি হবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ইপিজেড।

কুমিল্লা এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি জামাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে কুমিল্লার প্রাচীন বিমানবন্দরটি চালু হলে এখানে আরও বেশি বিনিয়োগ বাড়বে। যাতায়াত যত নির্বিঘ্ন করা যাবে ততই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আরও বেশি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি ইপিজেডের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাটা খুবই দুর্বল। কর্তৃপক্ষ যেন যেটার প্রতিও নজর দেয়। 

আরিফ আজগর/এএএ