৮৭ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়!
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় যশোরে ছোট থেকে বড় সব ধরনের ফার্মেসিতে চলছে তীব্র স্যালাইন সংকট। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা। অসাধু সিন্ডিকেট এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা নরমাল স্যালাইন (এনএস) ঠিকমতো পাচ্ছেন না। বাজারে সংকট থাকায় অনেক সময় বাড়তি টাকা দিয়েও ফার্মেসিতেও মিলছে না এই স্যালাইন। আবার পাওয়া গেলেও দাম নেওয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি বলে দাবি করছেন ক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে যশোরের বিভিন্ন ফার্মেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই থেকে তিন মাস ধরে চলছে সব ধরনের স্যালাইনের তীব্র সংকট। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে স্যালাইনের অর্ডার করেও পাওয়া যায় না। আবার স্যালাইন পাওয়া গেলেও সেটা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট গ্রামের ডেঙ্গুতে আক্রান্তে ভর্তি রোগীর এক স্বজন বলেন, ডাক্তার বলেছেন আমার রোগীর স্যালাইন চলবে। কিন্তু আমাকে একটার বেশি স্যালাইন দিল না, এখন আবার একটু পরে অন্য কাউকে পাঠিয়ে আরেক ব্যাগ স্যালাইন কেনার চেষ্টা করতে হবে। বিভিন্ন দামে কিনতে হচ্ছে স্যালাইন। কখনো ২৫০ কখনো ৩০০ আবার কখনো ৩৫০ টাকা দামে। তবে গায়ে দাম লেখা আছে ৮৭ টাকা। আমরা গরিব মানুষ এত বেশি দামে কিনতে হলে আমরা বাঁচবো কী করে।
বিজ্ঞাপন
স্যালাইনের সরবরাহ ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে সামনের নতুনহাট ফার্মেসির পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (জনি) বলেন, দুই-তিন মাস ধরে স্যালাইনের সংকট চলছে। অনেকেই স্যালাইন কিনতে আসে, তবে আমাদের কাছে না থাকায় দিতে পারি না। ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই স্যালাইন ঠিকমতো পাই না। কোম্পানির লোকেরা মাঝে মাঝে ১০/১২ ব্যাগ দেয়, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকারা জানান, নরমাল স্যালাইনের সরবরাহ নেই। রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে কিনে আনার জন্য লিখে দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এক ব্যাগও নরমাল স্যালাইন নেই। ১২ হাজার স্যালাইন চাহিদা দেওয়া হলে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মোট ১৫০০ নরমাল স্যালাইন ইডিসিএল থেকে বরাদ্দ আসে। চাহিদার তুলনায় এতো কম স্যালাইন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়া অনুদানের স্যালাইন পেয়েছিলেন মাত্র কয়েকশ পিচ। যা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। এখন হাসপাতাল স্যালাইন শূন্য।
ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট যশোর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য আহসান কবীর নিপু বলেন, চাহিদার তুলনায় নরমাল স্যালাইন উৎপাদন কম হওয়ার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে যার কাছে স্যালাইন আছে সেগুলো যেন ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয়। এরপরেও যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করেন তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত।
ওষুধ প্রশাসন যশোরের উপ-পরিচালক মহেশ্বর কুমার মন্ডল বলেন, সংকটকে পুঁজি করে স্যালাইন বেশি দামে যাতে বিক্রি না হয় সেদিকে নজরদারি রয়েছে। কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ্যান্টনি দাস অপু/এএএ