আশা রাজবংশী

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা। ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে। স্থায়ী বাধ নির্মাণের আগে বালুর বস্তা ভর্তি জিএ ব্যাগ ফেলে রাখা হয়েছিল ভাঙন কবলিত ওই স্থানে। কিন্তু জিএ ব্যাগ সরে গিয়ে ১ কিলোমিটারের অধিক স্থান জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার বড় নওপাড়া ও বেজগাঁও ইউনিয়নের সুন্দিরসার এলাকায় গত ৫ অক্টোবর থেকে এ ভাঙন শুরু হয়। ইতোমধ্যে ২১টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় নওপাড়া গ্রামে নদীর তীরবর্তী জায়গায় বড় বড় ফাটল। জিএ ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে ভাঙন ঠেকাতে। তারপরেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙন। ওই এলাকায় এক বছর আগে ফেলা জিওব্যাগ সরে গিয়ে মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে। ভাঙন আতঙ্কে গাছপালা কেটে ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। 

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ অক্টোবর লৌহজং উপজেলার তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া এলাকায় আকস্মিক ভাঙনে মুহূর্তেই চারটি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে ভাঙন অব্যাহত আছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীর পারের কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি বসত ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও কমপক্ষে ৩টি পাকা ভবন একবারে নদীর পার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। 

ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা একটি বাড়ির মালিক রিপন রাজবংশী। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী। নদীর পার ঘেঁষে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। ভবন নির্মাণের পর আর তিনি দেশে না আশায় একদিনও বসবাস করেনি ওই ভবনে। রিপন রাজবংশীর মা ও ভাইয়ের পরিবার থাকতেন ওই বাড়িতে। কিন্তু গত ৫ অক্টোবর ভাঙন শুরু হওয়ার পর ওই দিনই রিপন রাজবংশীর ৩ প্রতিবেশীর ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ইতোমধ্যে রিপন রাজবংশীর ভবনেরও কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ দাঁড়িয়ে থাকলেও  ভবনের দরজা জানালা খুলে সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। তার ভাইদের টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি ঘরগুলোও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কথা হয় রিপন রাজবংশীর মা আশা রাজবংশীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলেটা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকে। করোনার সময় দেশে টাকা পাঠিয়ে পাকা ভবন নির্মাণ করে। নিজের টাকায় বানানো সেই বাড়িতে একদিনও থাকতে পারলো না। 

তিনি আরও বলেন, সরকার অন্য জায়গা দিয়ে বালুর বস্তা ফেলেছে। যদি আমাদের বাড়ির সামনে বস্তা ফেলতো তাহলে বাড়িটা নদীতে বিলীন হতো না। গত ১২ দিন আগের ভাঙনে আমাদের বাড়ির পাশের জিতেন, বান্দু রাজবংশী, নিলুর বাড়ি ভেঙে গেছে নদীতে। জিতেনের তিনটি ঘর এবং একটি পাকা ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্বপনের রাজবংশীর স্ত্রী শ্রাবন্তী রাজবংশী বলেন, আগে পাকা ভবনে বসবাস করতাম। সেটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ছোট একটি দোচালা ঘরে ওপরে নিচে বিছানায় গাদাগাদি করে ১২ জন থাকি। কোথায় থাকবো কোথায় যাব। মানুষ হাড়ি পাতিল রাখার মতো জায়গাও দেয় না। ১১ দিন বিদ্যুৎ ছিল না কি যে কষ্টে ছিলাম। 

এ ব্যাপারে পনি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনেন্দ্র সরকার চক্রবর্তী বলেন, যেদিন থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে তখন থেকেই আমরা জিএ ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলছি। ভাঙন অনেকটা কমে আসছে। ইতোমধ্যে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভাঙন কমে যাবে। শীত মৌসুম শুরু হলেই পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই স্থানে স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু করবো।

ব.ম শামীম/এএএ