উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চাষ হয় সবুজ শাক-সবজি। সাধারণত স্থানীয় বাজারে এ শাক-সবজি তুলনামুলকভাবে কম দামে বিক্রি হয়। পরে রাজধানীতে এসব জেলার শাক সবজি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ বছর কৃষকের অনেক সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় পর্যাপ্ত সবজি নেই বাজারে। ফলে সবজির প্রধান উৎপাদন স্থল উত্তরবঙ্গেই সবজির দাম চড়া।

উত্তরের বিভাগীয় শহর রংপুরের প্রধান সবজি বাজার পৌর বাজার, লালবাগ বাজার, চক বাজার ও মর্ডান বাজার ঘুরে দেখা যায় সব জায়গাতেই সবজির দাম চড়া। প্রতিটি সবজিতে গত বছরের চেয়ে কেজিতে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, সিম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা।

সবজির এ অস্বাভাবিক দামে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। রংপুর সালামের মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক জাকারিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভালো নাই বাজান। আনাজপাতির যে দাম ভালো মন্দ কিছু কিনবের পাই না। কোনোমতে নুন ভাত খেয়ে বাঁচি আচি। যে টেকা কামাই করি তা দিয়ে চাউল কিনলে আর তিন বেলায় জন্যে আনাজপাতিও কেনা যায় না।’

লালবাগ বাজারে কথা হয় কাঠমিস্ত্রি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আর চলতে পারছি না। দুই হাতের কামাই দিয়ে সংসার চলে। বাজারে আসলে তিন বেলার সবজি কিনতে সব টাকা শেষ। পরিবারের তো আরও খরচ আছে সেগুলো সামলাই কি করে?

স্কুল মাস্টার মতিউর রহমান বলেন, রংপুরে সবজির এতো দাম এর আগে কখনও দেখিনি। সব সবজি কেজি প্রতি ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এ বছর সবজির দাম দ্বিগুণ এরও বেশি। যদি দ্রুত দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা না যায় তাহলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

দ্রব্যমূল্যের চড়া দামে সবজি ব্যবসায়ীরাও আছেন চরম সংকটে। রংপুরের চকবাজার সবজি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সবজির সরবরাহ কম দাম বেশি। দাম বেশি হওয়ার কারণে বিক্রি কম হচ্ছে। মানুষ দুই কেজির জায়গায় এক কেজি নিচ্ছে। আমাদের তেমন একটা লাভ থাকছে না। অনেক সময় সবজি বিক্রি না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরাও ক্ষতির মধ্যে রয়েছি।

সবজি ব্যবসায়ী আমিনুর মিয়া বলেন, অসময়ে বন্যা আর বৃষ্টির কারণে কৃষকদের আগাম সবজি সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে বাজারে সবজি আসতে আরও দেড় থেকে দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। নতুন সবজি আসলে সরবরাহ বাড়বে তখন দাম কমবে।

শিপন তালুকদার/এএএ