সবজি পরিবহনে খরচ বেড়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা!
দেশের মোট সবজি চাহিদার ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করা হয় বৃহত্তর কৃষি অঞ্চল যশোর থেকে। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সবচেয়ে বড় যশোর সদরের বারীনগর সাতমাইল সবজির মোকাম থেকে সারাদেশে সবজি সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের ঘোষিত হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সবজি পরিবহনে সড়কপথে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না এ অঞ্চলের পাইকার ব্যবসায়ীদের। তবে পরিবহন খরচ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি লাগছে। ফলে স্থানীয় খুচরা বাজারে সবজির দাম কম থাকলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে যশোরের সাতমাইল বারীনগর সবজি মোকামে পাইকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। মোকামে উঠতে শুরু করেছে আগাম শীতের সবজি। ব্যবসায়ীরা জানান, এই মৌসুমে বাজারে মূলা, বেগুন, লাউ, শিম, পটল ইত্যাদি সবজি বাজারে আসছে। সপ্তাহখানেক আগেও সবজির বাজার ছিল চড়া। এখন দাম স্থানীয় খুচরা বাজারে অনেকটাই কমেছে।
যশোর সদরের মথুরাপুর এলাকার ক্ষেতেল (চাষি) আয়নাল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি তার দুই বিঘা জমিতে মূলা চাষ করেছেন। সপ্তাহখানেক ধরে তিনি বাজারে মূলা বিক্রি করছেন। প্রথমদিকে কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও আজ সর্বোচ্চ ২২ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নাউখালী গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত লাউ আনি বাজারে। এই মৌসুমে প্রতিটি লাউ গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আজকের বাজারে ২২-২৫ টাকা বলেছে পাইকাররা। গতকাল বিক্রি করেছিলাম ৩০ টাকা পিস।
মঙ্গলবার সকালে বারীনগর বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা, মূলা ২২ থেকে ২৮ টাকা, শিম ৯০-৯৫ টাকা, পটল ২৮-৩০ টাকা, লাউ ২২-২৫ টাকা এবং পেঁপে ১৬ টাকা কেজি দরে।
ব্যসায়ীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ৩ থেকে ৪ টন সবজি ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতাকালে সেটি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং ৫ থেকে ৬ টন সবজি পাঠাতে স্বাভাবিক সময়ে ২২ হাজার টাকা লাগলেও এই সময়ে সেটি ৩০ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় সবজি পাইকার মনির হোসেনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবজি ঢাকায় পাঠানোতে কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত আন্দোলনকারীরা কাঁচা সবজির ট্রাকে ঝামেলা করে না। কিন্তু ট্রাকের চালকরা রিস্ক নিতে একটু বেশি টাকা দাবি করেন।
তিনি বলেন, এরশাদ-খালেদা শাসনামলে কারফিউ, অসহযোগ আন্দোলন, অবরোধ, ধর্মঘট, হরতাল চলাকালেও ঢাকায় সবজি পাঠিয়েছি।
আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ৪ টন ও ৭ টন মাল পাঠাতে আমার যথাক্রমে ১৬ ও ২৫ হাজার টাকা লাগলেও গত হরতাল ও আজকের অবরোধে সেই একই পরিমাণ মাল পাঠাতে ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ দিতে হবে। গতকালকের মতো আজও সন্ধ্যায় তিনি ৪ টন করে দুই ট্রাক সবজি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পাঠাবেন বলে জানান।
এ মোকামের পাইকার আতিয়ার রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় দুইটি ট্রাকে সবজি পাঠিয়েছি। আজও একই পরিমাণ পাঠানোর ইচ্ছা আছে। এ কারণে সবজি কেনা শুরু হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম নামে ঢাকার এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবজি ঢাকায় নির্বিঘ্নে পাঠাতে আমাদের কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এখন গাড়ি প্রতি যে টাকা খরচ হচ্ছে, স্বাভাবিক সময়ে সেই টাকার অংক কম ছিল ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। ছোট গাড়িতে ৮ আর বড় গাড়িতে ১০ হাজার টাকা এখন বেশি লাগছে।
এ্যান্টনি দাস অপু/এমএএস