রহিমের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম

যশোরের মণিরামপুরের হতদরিদ্র রিকশাচালক বাবার অদম্য মেধাবী ছেলে আব্দুর রহিমের মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলেন মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম। ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি ও লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল রহিমের। তার ভর্তির অনিশ্চয়তার বিষয়টি ঢাকাপোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে। বিষয়টি দেখার পর রহিমের প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম।

রোববার (১১ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার গৌরিপুর গ্রামে রিকশাচালক আব্দুল হালিমের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম। এরপর তিনি আব্দুর রহিমের বাবা-মায়ের হাতে ভর্তি খরচ ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, রহিমের পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তার সংগঠন টিম পজিটিভ বাংলাদেশের (টিপিবি) পক্ষ থেকে আব্দুর রহিমের ভর্তির খরচ বহন এবং যাবতীয় বই কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

আব্দুর রহিম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামের রিকশাচালক আব্দুল হালিম বিশ্বাস ও গৃহিণী জেসমিন খাতুন দম্পতির ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আব্দুর রহিম বড়। রহিম ঢাকা কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭৬.৫ নম্বর।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রহিমের বাবা একজন দরিদ্র রিকশাচালক। রহিমের বাবার নিজ বাড়ির ২ কাঠা জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। বাড়িতে ছোট টিনের একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। নুন আনতে পান্তা ফুরানো রহিমের বাবার পক্ষে ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানো অসম্ভব ছিল।

বাবা আব্দুল হালিম বিশ্বাস বলেন, মনে বড় ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ডাক্তারি পড়াব। আল্লাহর ইচ্ছায় ছেলে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ওর ভর্তি খরচ, বই কেনা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম হঠাৎ করেই রোববার আমার বাড়িতে আসে। ছেলেকে মিষ্টি মুখ করার সঙ্গে ভর্তির জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমার কিছুটা চিন্তা দূর হয়েছে। এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

এই বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আব্দুর রহিমের খোঁজ নিয়েছি। জানতে পারলাম ওই ছেলেটার বাবা রিকশা চালান। টাকার অভাবে একটা মেধাবী মুখ হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।

ছেলের মেডিকেলে ভর্তির খরচ নিয়ে চিন্তায় ছিল ওই হতদরিদ্র বাবা-মা। তাই আমি রহিমের ভর্তির জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো প্রয়োজনে আব্দুর রহিমের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, আব্দুর রহিম ২০১৮ সালে মণিরামপুরের নেংগুড়াহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এরপর ভর্তি হন ঢাকার পিলখানা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদ পাবলিক কলেজে। বিজ্ঞান বিভাগে ১৫০ জনের মধ্যে প্রথম হওয়ায় বিনা খরচে সেখানে পড়ার সুযোগ পায়।

২০২০ সালে করোনাকালীন সরকারের অটোপাসের সিদ্ধান্তে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়। এইচএসসির ফলাফল পাওয়ার আগে ভর্তি হন মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে উঠা মেডিকো কোচিং সেন্টারে। অংশ নেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। মেধা তালিকায় ৭২৪তম স্থান পেয়ে পড়ার সুযোগ পান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।

জাহিদ হাসান/এসপি