এক কলেজ থেকে এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। এমন সাফল্য দেখিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। অভাবনীয় এ সাফল্যে খুশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ৫২৬ জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন। চলতি বছর এ কলেজ থেকে জাতীয় মেধায় ৪২তম স্থান অর্জন করেছেন তনুশ্রী রাণী সুত্রধর ও ১৬৩তম স্থান অর্জন করেছেন জয়িতা বীর।

৪৫৪তম হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন ফাতিমা বিনতে ইসমাইল। ৭৭২তম হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে উত্তীর্ণ হয়েছেন আব্দুল আহাদ। ৩৪২১তম হয়ে যশোর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন আবু  সালেহ আল কাদেরী। ১৮৯৮তম হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে উত্তীর্ণ হয়েছেন সাদিকা বিনতে বাশার নীলা। জাতীয় মেধায় ১৯৯২তম হয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরে ভর্তি হবেন চিকিৎসক দম্পতির সন্তান সানজিদা আখতার।

 মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ার এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কলেজের শিক্ষকরা 

এ ছাড়াও কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহানের দেওয়া তথ্য মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন জান্নাতুল মাওয়া মুমু, ফারহানা রহমান, কাজী লামিয়া সুলতানা, নুসরাত জাহান। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে পারভীন আক্তার, শারমিন আক্তার, নাজমা খাতুন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে সাবেকুন্নাহার শারমিন, সামিহা নুর, মরিয়ম জাহান তামান্না, সাদিয়া রহমান আফনান, ফাহমিদা জাহান অনিকা। 

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে তানজিলা বিনতে ওয়াহিদ, নাজমুন নাহার বিথী। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ওসমা হাবিব, সায়মা। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে রুনা লায়লা, আয়শা সিদ্দিকা মিটু, আজাদুল ইসলাম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে জান্নাত আক্তার লাভনী, উম্মে হালিমাতুস সাদিয়া, সাবিহা, জান্নাতুল মাওয়া অনামিকা।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজে সানজিদা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে সাবিকুন নাহার সারমিন, মিথিলা আফরোজা মিটু ও ফারিয়া আক্তার। টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে নাফিসা তাবাসসুম তাসনিয়া। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে সাদিকা বিনতে বাশার নীলা, হাফসা জান্নাত, মো. নাঈম রহমান। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে আফসারা তাহসিন, নাজমুল হোসাইন, জাকিয়া সুলতানা লিমা, অর্পি বারুয়া, অনন্তা কুমার ভৌমিক, ফাহিম ও মোস্তফা তানিন।

সিরাজগঞ্জ শহীদ মোহাম্মদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে নাজিলা হোসাইন সুপরা। নোয়াখালী আবদুল মালেক উল মেডিকেল কলেজে ফারজানা আক্তার সায়মা। মানিকগঞ্জ কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজে প্রিতম দেব নাথ, সাকিব। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে এসএম মাসহিউর রহমান। খুলনা মেডিকেল কলেজে মো. সাব্বির বিন এনাম, মো. শাহাদাত। পাবনা মেডিকেল কলেজে হাফসা আক্তার, আব্দুল মান্নানসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

সদ্য মেডিকেল কলেজে উত্তীর্ণ সানজিদা আখতার ও আবু সালেহ আল কাদেরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলেজে শিক্ষার মান, শিক্ষকদের পড়ানোর বিশেষ পদ্ধতি ও আন্তরিকতার ফলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব হয়েছে। নিয়মিত ক্লাস করেছি। শিক্ষকদের কথানুযায়ী পড়েছি। সকল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। এখানে কলেজ জীবনটা যেমন স্মৃতির, তেমন ভয়েরও। 

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে উত্তীর্ণ ফাতিমা বিনতে ইসমাইল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলেজে না এলে ই-এটেনডেন্সের মাধ্যমে মা-বাবার মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা চলে যেত। এরপর আবার প্রতি ক্লাসে হাজিরা দিতে হয়। সাপ্তাহিক, মাসিক পরীক্ষা, করোনাকালে অনলাইন ক্লাস, অনলাইন মূল্যায়ন পরীক্ষা আমাদের বেসিক ক্যারিয়ার তৈরিতে সাহায্য করেছে। শিক্ষকদের ব্যতিক্রম উদ্যোগের ফলে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী এ কলেজ থেকে মেডিকেল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।

কলেজের শিক্ষার মান ও অবকাঠামো নিয়ে ঢাকা পোস্টের কথা হয় তিনজন অভিভাকের সঙ্গে। লায়লা পারভীন, মো. ইসমাইল ও রেহেনা শিরিন নামে তিন অভিভাবক মন্তব্য করে বলেন, এটি চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। এ কলেজের শিক্ষার মান নিঃসন্দেহে অনেক ভালো। অভিভাবক সমাবেশ ছাড়াও শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। আমরাও স্যারদের থেকে খবর নেই। এ সমন্বয়ের কারণে ভালো ফলাফল হচ্ছে।

তারা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা এ ধারা অব্যাহত থাকুক। যদি শ্রেণিকক্ষ ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো হয়, দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজের পক্ষ থেকে আবাসিক সুবিধা থাকতো তাহলে ফলাফল আরও ভালো হতো। শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। 

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা তোফা ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবাইদা নূর খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজের পাঠচর্চা, পাঠপরিকল্পনা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন। এখাকার প্রতিটি শিক্ষক মেধাবী ও জ্ঞানের চর্চা করেন। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও মেধাবী ও পরিশ্রমী। কারোনাকালে উচ্চ মাধ্যমিকের তিন বিভাগের ৭ শতাধিক ভিডিও ক্লাস প্রচার করা হয়েছে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার ধারাবাহিক এ চর্চা মেডিকেলসহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে রাখবে। তারা পরবর্তী জীবনে যেকোনো কাজে ভালো করবে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভালো ফলাফলের কোনো পক্ষ নেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই চায় ভালো ফলাফল। সবাই আমরা এক পক্ষ। অভিভাবক সমাবেশে আমরা বলেছি, ছাত্র-ছাত্রী আমাদের কাছে থাকে চার ঘণ্টা। বাসা বাড়িতে থাকে ২০ ঘণ্টা। তাই অভিভাবকের দায়িত্ব বেশি। এ কলেজ থেকে ২০১৭ সালে ১৩৬ জন, ২০১৮ সালে ৯৯ জন, ২০১৯ সালে শতাধিক, ২০২০ সালে ১৬৮ জন ও চলতি বছর দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সবাইকে অভিনন্দন। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে আমরা সংবর্ধনার আয়োজন করব।

আমাদের সকল ক্লাস প্রজেক্টরে নেওয়া হয়। আমাদের সকল শিক্ষক প্রযুক্তিতে দক্ষ। একদিন শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে অভিভাবকদের জানাই। পরপর তিন দিন ক্লাসে না এলে কলেজ থেকে কল দেওয়া হয় আপনার সন্তান কেন কলেজে আসেনি। এসব কারণে প্রতি বছর আমাদের ফলাফল যেমন ভালো হয় সকল প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায়ও আমরা এগিয়ে থাকি। 

কারোনাকালেও আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ও পরীক্ষা চলমান আছে। করোনার ছুটিতে আমরা দুইটি ডিজিটাল স্টুডিও তৈরি করেছি। ১৭০ জন শিক্ষক ভিডিও ক্লাস তৈরি করে সংসদ টিভিতে পাঠান। অনলাইনে সাংস্কৃতিক ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আশা করি গত বছর থেকে এ বছর পাবলিক পরীক্ষায় ভিক্টোরিয়ার ছেলে-মেয়েরা আরও ভালো করবে।

এসপি