বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি কাস্টমস হাউসের ব্যাপক কড়াকড়ি ও হয়রানির কারণে গত ৪ মাসে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক আমদানিকারক এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, মোটর পার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, নেসলে, আপেল ও মোটরগাড়ি আমদানিকারকরা এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে এসব পণ্য থেকে ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। শুধু গত ৪ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ২৪০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এ ছাড়াও আপেল আমদানিতে ২৪ কোটি ও ফেব্রিকস আমদানিতে ২১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, কাস্টমস হাউসের ব্যাপক কড়াকড়ি, অনিয়ম ও হয়রানির কারণে আমদানিকারকরা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যার প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে বাণিজ্যে আবারও গতি ফিরবে বেনাপোল বন্দরে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ওয়্যার হাউজিং কর্পোরেশনের অধীনে বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০২ সালে মর্যাদা পায় স্থলবন্দরের। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।

সি অ্যান্ড এফ ব্যবসায়ী জুয়েল রানা জানান, নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্যান্য উচ্চ পচনশীল পণ্যেও চালান আসতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। এর ফলে অধিকাংশ কার্টুনের ফল পচে যায়। এ ধরনের পচনশীল পণ্যের রাজস্ব নেওয়াতে অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান জানান, রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বড় ধ্বসের কারণ হলো কাস্টমস হাউসে ডকুমেন্ট সাবমিট করার পর নিচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পণ্যের এইচ এস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব কমে গেছে। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও মোটরপার্টস থেকে ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।

এ্যান্টনি দাস অপু/এএএ