লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা নজরুল হত্যা মামলার সব আসামি খালাস
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম (২৮) হত্যা মামলার সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে কেউই সাক্ষী দেয়নি। এতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের খালাস দেন।
খালাস প্রাপ্তরা হলেন, আল মামুন প্রকাশ খোকন ডাকাত, শেখ ফরিদ প্রকাশ শেখু ডাকাত, মুরাদ প্রকাশ মুরাদ ডাকাত, রিয়াজ প্রকাশ রিয়াজ ডাকাত, সুমন, আরজু প্রকাশ আরজু ডাকাত ও জসিম। তারা রামগতি উপজেলার চরআবদুল্লাহ ইউনিয়নের চরগজারিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
বিজ্ঞাপন
আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, ভিকটিম ছাত্রলীগ নেতা নজরুল চরগজারিয়া গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে ও ভুষা মালের ব্যবসায়ী ছিলেন। এলাকায় তিনি দস্যুদের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। এতে তার সঙ্গে দস্যু খোকন বাহিনীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এলাকা থেকে তিনি ব্যবসায়িক মালামাল উপজেলা শহরে আনা নেওয়া করতেন। এনিয়ে খোকন বাহিনীর অন্যতম সদস্য শেখু ডাকাত নজরুলের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে মারধরও করে তারা। তখন নজরুলের ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খোকন ডাকাতসহ তার বাহিনীর সদস্যরা নজরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেয়।
২০১৭ সালের ২১ জুন বেলা ১১টার দিকে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি সয়াবিন বিক্রির কথা বলে নজরুল ও তার ভাই ফরিদকে স্থানীয় বয়ার খাল এলাকায় ডেকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছা মাত্রই আগ থেকে ওৎ পেতে থাকা খোকন ডাকাতসহ আসামিরা নজরুল ও ফরিদের ওপর হামলা করে। এসময় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নজরুলকে আহত করা হয়। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান পায়ে আঘাত করে আসামিরা। এসময় নজরুলকে বাঁচাতে গেলে তার ভাই ফরিদকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে লোকজনকে আসতে দেখে আসামিরা ট্রলারে করে মেঘনা নদীর অদূরে পালিয়ে যায়। আহত নজরুল ও ফরিদকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৫ জানুয়ারি সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নজরুল মারা যান। তখন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাসের নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়। একইদিন নজরুলের ভাই আবু ছায়েদ বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামি করে রামগতি থানায় মামলা দায়ের করেন।
২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক তৌহিদুল আনোয়ার আদালতে খোকন ডাকাতসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় এজাহারভুক্ত বিবাদী জমির, ফখরুল, আজিম, আবুল খায়ের, আবু তাহের, আবদুল মতিন প্রকাশ মতি ডাকাত ও মাকসুদকে মামলা থেকে অব্যাহত দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে জানা যায়, নজরুলের ভাই ফরিদ ও বিবাদীরা মেঘনা নদীর মৌলভীর চর এলাকায় জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতো। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তদন্তকালে উভয়পক্ষ কেউ কারও কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জেলেদের কাছে চাঁদা দাবির ঘটনা নিয়েই মামলার ঘটনাটির সংঘটিত হয়। ঘটনাস্থল উপজেলার একটি বিচ্ছিন্ন চর এলাকা। ইঞ্জিনচালিত নৌকা হলো সেখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। সেখানে রামগতি, নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা ও বরিশালের নদী ভাঙা মানুষের বসবাস। ওই চরের জমির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যার পেশি শক্তি বেশি, সে চর এলাকায় জমি দখলপূর্বক নিয়ন্ত্রণ করে। ওই পক্ষই জমির ভাগবাটোয়ারার বিষয়গুলো দেখে। আর এ পেশি শক্তি ও জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি সংঘটিত হয়। তখন মারধরে নজরুলের বুকের বাম পাশে দুটি জখম হয়। এ কারণে হার্টে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মামলার বাদী চরআবদুল্লাহ ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সভাপতি আবু ছায়েদ বলেন, মামলাটি ৩ বার তদন্ত হয়েছে। এরমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেককেই মামলা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাই নজরুল ছাত্রলীগ নেতা ছিল। কিন্তু তার হত্যার বিচারের জন্য দলীয় কারোই সহযোগিতা পাইনি। আসামিরা অনেক ক্ষমতাধর। তাদের ভয়ে সাক্ষীরাও আমাদের বিপক্ষে চলে গেছে। এজন্য পরিবারের কথা চিন্তা করে মামলাটি মীমাংসা করে নিতে বাধ্য হয়েছি।
শাকিল/এসএম