ঘূর্ণিঝড় মিধিলি
‘ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল’
ফেনীতে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলির’ প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠের আমন ধান ও শীতকালীন সবজি। ফলন ভালো হলেও আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ফেনীতে ৬৬ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৬১৬ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৫ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
সূত্র আরও জানায়, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলায় ২৮২ হেক্টর আমন, ২৩ হেক্টর শীতকালীন সবজি, ২ হেক্টর সরিষা ও দশমিক ৫ হেক্টর খেসারি দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে।
পরশুরামের বীরচন্দ্র নগর গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, আমনে ভালো ফলন হলেও ফসল কাটার পর বাড়িতে আনতে পারিনি। চলমান অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে বড় ধরনের লোকসানের কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মো. ইউনুছ নামে আরেক কৃষক বলেন, বৃষ্টি না হলে গতকাল থেকে ধান কাটা শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ায় ২০ শতকের বেশি জমির পাকা ধান বাতাসে নুয়ে পড়েছে। একদম ঘর তোলার মুহূর্তে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
ছাগলনাইয়া নিজকুঞ্জরা এলাকার কৃষক মমিনুল হক বলেন, ফলন ভালো হলেও আমন ধান ঘরে তুলতে পারব কি না জানিনা। এত টাকা পুঁজি দিয়ে একদম শেষ সময়ে এসে বাতাসে ১৫ শতকের বেশি জমির ধান নুইয়ে পড়েছে। আরও কিছু জমিতে রবি শস্য রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বৃষ্টির জন্য সময়মত আবাদ করা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সময়মত আবাদ করতে না পারলে লোকসান গুণতে হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন বলেন, বৃষ্টি বন্ধ হলে জমির পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে এখন একটি খসড়া হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে খেতের ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব ধান এখনো কাটা হয়নি, বাতাস না হলে সেগুলোতে তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা মাঠে থাকা কাটা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রুত যেন কাটা ধানগুলো ঘরে তোলা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও রাত থেকে বৃষ্টিপাতের বেগ বাড়তে থাকে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমের তীব্র বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে বিভিন্নস্থানে গাছ উপড়ে পড়ে। তবে কোথাও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আজও আকাশ মেঘলা ও হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, ঝড়ো হাওয়ায় চরচান্দিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া উপজেলায় ৫৫ হেক্টর ধান বাতাসে নুইয়ে পড়েছে।
তারেক চৌধুরী/আরকে