আজ ৮ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় চাঁদপুর। চাঁদপুর থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। 

১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিং এর মাধ্যমে প্রথম আক্রমণ করে। ৮ এপ্রিল বিকেলে প্রায় ৫শ পাকসেনা বোঝাই একটি বহর চাঁদপুর আসে। শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে তারা। এই স্কুল মাঠে লতুফা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে। তার পালিত গরু-ছাগল দিয়ে পাকবাহিনী রাতের খাবার খান। 
 
ওই দিন রাতেই মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা  আহত হন। ৯ এপ্রিল ভোরে পাকবাহিনী শহরে প্রবেশ করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল হোসেন (৫৫) নামে অপর এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। 

এরপর শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া; হাজীগঞ্জের অলীপুর গুদারাঘাট; বালাখাল খেয়া ঘাট; ফরিদগঞ্জের বাসারা এবং গাজীপুরসহ মোট ২৬টি সম্মুখযুদ্ধ হয়। 

চাঁদপুর মহকুমায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয় ৭ ডিসেম্বর। লাকসাম ও মুদাফফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর। যৌথবাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করে। ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের পর পালিয়ে যায় পাকবাহিনী। মুক্ত হয় চাঁদপুর।

কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের বর্বরতম হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তরপুরুচন্ডী গ্রামের বাসিন্দা মো. নান্নু মিজি জানান, তিনি এবং তার বড় ভাইকে সন্ধ্যার দিকে ধরে নিয়ে আসে পাকবাহিনী। তারা তাদের কবর খননের নির্দেশ দেয়। বাড়ি যাবে জানালে পিটিয়ে আহত করে এবং জোর করে তিনটি কবর খনন করে নেয়। পরে ওই কবরেই তিন পাকসেনার কবর দেয়া হয়।

বিএলএফ কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হানিফ পাটোয়ারী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমাকে ফরিদগঞ্জের দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই সময় আমাদের নির্দেশ দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি করার। ফরিদগঞ্জের কড়াইতলী হাইস্কুলে আমরা একটা ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করি। সেখানে শতাধিক ছেলেকে ট্রেনিং দিয়ে মুক্তিবাহিনী বড় করি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃৃতি রক্ষার্থে চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে বড় স্টেশনের বদ্ধভূমিতে নির্মাণ করা হয় ‘রক্তধারা’। এর আগে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুশীল, সংকর ও খালেক এর নামে ট্রাক রোডে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তিসৌধ’ এবং চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে লেকের ওপর দৃশ্য ভাসমান মুক্তিস্মৃতি সৌধ ‘অঙ্গীকার’ নির্মাণ করা হয়। 

চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ‘শপথ চত্বর’।

এসপি