সাভারে মনোনয়ন যুদ্ধে ৬ আ.লীগ নেতা, চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন সাইফুল
ফারুক হাসান তুহিন, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, এনামুর রহমান, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মঞ্জরুল আলম রাজীব ও মুরাদ জং (ওপরের বাম থেকে)
সাভারের আশুলিয়া তথা ঢাকা-১৯ আসনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের ৬ নেতা। তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন অনেকেই। নৌকার মনোনীত প্রার্থী হতে বিগত দিনে ৬ জনই দলের পক্ষে কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। তাদের মধ্যে মনোনয়নের আশায় একজন ছেড়েছেন চেয়ারম্যানের চেয়ারও।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) আ.লীগের এই ৬ নেতার সঙ্গে কথা বলে মনোনয়নপত্র ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত তিন দিনে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে অনেকে জমাও দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-১৯ আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই বারের এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল আলম রাজীব, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম, সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে সবাই আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানে থাকলেও সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ দীর্ঘদিন ধরেই মাঠের রাজনীতির বাইরে আছেন। আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য গত ৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
তৃণমূল আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। তাই তারা রাজনীতি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু তৃণমূল আওয়ামী নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তবে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রাণ। তাকে মনোনীত করা হলে তৃণমূল আওয়ামী রাজনীতি যারা করেন তারা যোগ্য একজন নৌকার মাঝি পাবেন। এছাড়া তাকে নৌকা প্রতীকে মনোনীত করা হলে তার জনপ্রিয়তা আর তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভালবাসায় নিশ্চিত বিজয়ী হবেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তৃণমুল আওয়ামী নেতা আব্দুল লতিফ, মতিউর রহমান মতি, পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান, অধ্যক্ষ আব্দুল কাদির দেওয়ান ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহমদ ভূঁইয়া বলেন, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের কিভাবে ভালবাসতে হয় তা জানেন। এজন্য নির্বাচনী প্রচারণায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ নেতাকর্মীদের ঢল নামে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় যে উন্নয়ন করেছেন তা ইউনিয়নবাসীর স্বপ্ন ছিল। তিনি ধামসোনা ইউনিয়ন ঢেলে সাজিয়েছেন। তেমনি পুরো সাভার আশুলিয়া তথা ঢাকা-১৯ আসনটি ঢেলে সাজাতে চান। জনগণও বিশ্বাস করেন এটা একমাত্র সাইফুল ইসলামের মাধ্যমেই সম্ভব। সাভার আশুলিয়া একটি শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানে লাখ লাখ শ্রমিক বাস করেন। তাদের মধ্যে ৮০ ভাগ শ্রমিকই এখানকার ভোটার। আর সাভার আশুলিয়ার সব (৪০ টি) শ্রমিক সংগঠন সাইফুল ইসলামকে সমর্থন করেছেন। সেদিক থেকে ভোটের মাঠেও এগিয়ে মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এ ব্যাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আজ পর্যন্ত উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রাম করেছি। উঠান বৈঠক পরিণত হয় জনসভায়, আর প্রোগ্রামে নামে হাজার জনতা আর নেতাকর্মীর ঢল। এতো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কিন্তু জনপ্রিয়তা কিংবা মায়ার টানেই আসেন। আমি মনে করি আমাকে মনোনীত করা হলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।
তবে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও মনোনয়নে এগিয়ে আছেন দুই দুই বারের নৌকা মনোনীত এমপি ডা. এনামুর রহমান। তিনি নৌকা প্রতীকে আবারও মনোনীত হবেন বলে দীর্ঘ দিন আগে থেকেই নৌকায় ভোট প্রার্থণা করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আশা করি এবারও আমিই নৌকার মনোনয়ন পাব। গত দুইবারের মতো ভোট দিয়ে জনগণ আবারও আমাকে সাভার আশুলিয়ার মানুষের সেবা করার সুযোগ দেবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ত্যাগী একজন নেতা। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বৈঠা হাতে ছিলেন সক্রিয়। বার বার কারাবরণ করেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসে। বর্তমানে তার নির্দেশনায় সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ সংসগঠিত। দলে ত্যাগের কথা বিবেচনা করলে মনোনয়নে তার অবস্থানও কম নয়।
এদিকে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন পরিচিত ম্যাজিকম্যান হিসাবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার রয়েছে সবচেয়ে বেশী যাতায়াত। উচ্চ পর্যায়ের নেতানেত্রীদের সঙ্গে রয়েছে সম্পর্ক।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেলকে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল ও ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। আওয়ামী রাজনীতিতে সাভারে তিনিও সক্রিয়। তিনিও মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন মনোনীত হওয়ার আশায়।
এদিকে ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদও এবার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। মনোনয়নের ব্যাপারে তিনিও শতভাগ আশাবাদী। এদিকে তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদের নেতাকর্মীরা এখনও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয়েছে আগামী ৭ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে মনোনয়ন সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সর্বশেষ দিন হলো ৩০ নভেম্বর।
আরকে