মহামারি করোনার বিস্তার ঠেকাতে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র ১ এপ্রিল থেকে ১৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে বন্ধ হয়ে যায় কুয়াকাটার সৈকতের আশপাশের চায়ের দোকান ও রেস্টুরেন্ট। আর এতে চরম বেকায়দায় পড়েন সৈকত এলাকায় জীবন যাপন করা ভবঘুরে ভারসাম্যহীন মানুষগুলো।

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ও পৌর এলাকায় ১৭ থেকে ২৫ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ ঘোরাঘুরি করেন। করোনাকালে তারা যে কতটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। এই মানুষগুলোর দিকে তাকালে খুব কষ্ট লাগে। সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের মুখে খাবার দিতে পেরে মনে তৃপ্তি পাই। তাই আমরা ‘কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাব’র মাধ্যমে ২ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি, ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন ক্লাবটির সভাপতি ও পর্যটন ব্যবসায়ী কে এম বাচ্চু।

তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির প্রথম ধাপের লকডাউনে টানা চার মাস তাদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছিলাম। চলমান লকডাউনে আমাদের সব ব্যবসা বন্ধ। তাই প্রতিদিন খাবার বিতরণে আমাদের কিছুটা আর্থিক সমস্যা হচ্ছে। তারপরও যত দিন লকডাউন থাকবে, তত দিন আমরা খাবার বিতরণ করব। ইনশা আল্লাহ। আমরা সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে তাদের ভালোভাবে খাবার বিতরণ করতে পারতাম।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই দুর্যোগকালে দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষদের পাশাপাশি খাদ্য-সংকটে পড়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে কিছু ছিন্নমূল মানুষ। যারা মূলত বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর উচ্ছিষ্ট, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা খাবার কিংবা কিছু মানুষের দয়ায় পাওয়া খাদ্যদ্রব্য খেয়ে বেঁচে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এসব ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষও পড়েছেন চরম খাদ্য-সংকটে।

তবে ন্যূনতম মানবিক অধিকারবঞ্চিত এসব ভবঘুরে মানুষের মুখে প্রতিদিন খাবার তুলে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাবের সদস্যরা।

বাচ্চু জানান, ভবঘুরে মানুষের খাবারের তালিকায় থাকে ব্রয়লার মুরগি, মাছ, ডিম, আলু ও সাদা ভাত। তার বাসায় রান্নার পর অনটাইম প্যাকেটে ভর্তি করে সংগঠনের সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে ভবঘুরেদের মাঝে বিতরণ করেন।

কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিদিন দুপুর ও রাতে রান্না করা খাবার কুয়াকাটা পৌর এলাকা ও সৈকতের বিভিন্ন স্থানে থাকা পাগলদের (মানসিক ভারসাম্যহীন) মাঝে বিতরণ করা হয়। করোনাকালে তারা এ অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। যত দিন খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে, তত দিন তারা এভাবে রান্না করা খাবার মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরেদের মুখে তুলে দেবেন।

মেহেদী হাসান বলেন, এভাবে রান্না করা খাবার দেওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলো কোথাও যান না। কুয়াকাটা পৌরসভার মধ্যেই থাকেন। বিশেষ করে কুয়াকাটা রাখাইন মহিলা মার্কেটের আশপাশে এবং সৈকতের পিকনিক স্পটে খাবারের জন্য অপেক্ষায় করতে থাকেন। আমরা খাবার নিয়ে এলে ছুটে আসেন। খাবার হাতে দিলে মানুষগুলোর মুখে তখন একটা স্বস্তির ছাপ লক্ষ করি। চলমান করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য এভাবে খাদ্যসহায়তা দিয়ে যাবেন বলে জানান মেহেদী হাসান।

কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাবের উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম মিরন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নিজেদের অর্থায়নে খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ দু-এক বেলার খাবারের টাকা দিচ্ছেন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সব সময় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোর পাশে আমাদের সংগঠন থাকতে পারবে।

এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানবতার সেবায় সব সময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাব অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। সংগঠনটি সব সময় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পাশে থেকে খাবার বিতরণ করছে। তবে সংগঠনের সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাবার বিতরণ অব্যাহত রাখবেন।

এনএ