‘আগের মতো কেউ কেনে না, কোনো রকমে বাঁচি আছি’
বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। মুখে শ্বেত-শুভ্র দাড়ি। কাঁধে ঝোলানো মাদুরের ভার। এভাবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাদুর বিক্রি করে সংসার চালান আসরাফ আলি। রংপুর শহরের আশরতপুর এলাকায় মাদুর বিক্রি করতে দেখা যায় আসরাফ আলিকে।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আগের মতো আর বিক্রি হয় না। মানুষ নিতে চায় না, দাম বেশি। দিন শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে কোনো রকমে বাঁচি আছি।’
বিজ্ঞাপন
আসরাফ আলির বাড়ি রংপুর জেলার নজিরের হাট এলাকায়। ছেলে-মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর সবাই আলাদা থাকে। মাদুর বিক্রি করেই স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলছে। তিনি নিয়মিত রংপুর শহর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে গিয়ে মাদুর বিক্রি করেন।
আসরাফ আলি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর ধরে মাদুর বিক্রি করছি। আগে কৃষিকাজও করতাম। বয়স হয়েছে অন্য কিছু করতে পারি না। মাদুর নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনো রকমে চলছে সংসার। প্রতিদিন বের হতে পারি না। দুই দিন মাদুর নিয়ে বের হলে এক দিন বিশ্রাম নিতে হয়। নইলে শরীর চলে না। হাঁপানির সমস্যাও আছে, তাই অল্প ঠান্ডা লাগলে আর ভার নেওয়া যায় না। তখন বসে থাকা লাগে। যখন হাঁপানি কমে যায় তখন আবার মাদুর নিয়ে বের হই।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, মাদুর সংগ্রহের জন্য আগের দিন পাইকারদের কাছ থেকে মাদুর নেওয়া লাগে। পরদিন এগুলো গ্রামে গ্রামে নিয়ে যেতে হয়। সবকিছুর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদুরেরও দাম বেড়েছে। এখন আর আগের মতো কেউ নিতে চায় না দাম বাড়ার কারণে। অনেক দূর যেতে হয় অল্প কয়েকটা বিক্রি করার জন্য। তবে কোনোদিন খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি হয় আবার কোনোদিন সারাদিন ঘুরেও শেষ করা যায় না। যেদিন ভালো বিক্রি হয় সেদিন ভালো-মন্দ কিছু কিনতে পারি, তা নাহলে তেমন কিছু কেনা যায় না। জিনিসপত্রের যে দাম, তরিতরকারির কিনলেই টাকা শেষ হয়। আবার এখান থেকে টাকা বাঁচিয়ে নিয়মিত ওষুধও কেনা লাগে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামের কেউ বেশি দামের জিনিস কিনতে চায় না। সেজন্য অল্প দামের জিনিস বেশি রাখি। কেননা বেশি দামের জিনিস কম টাকায় বিক্রি করতে হয়। কম দামের মাদুরগুলোই বেশি বিক্রি হয়।
আসরাফ আলি বলেন, ‘হামার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন সুস্থ রাখে, কারও কাছে যেন হাত পাতা না লাগে।’
শিপন তালুকদার/এনটি/এমজেইউ