যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মোট ১৫ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এ চিকিৎসক সংকট নিয়েই চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসক সংকটে অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিতে তাদের যশোরসহ দূর-দূরান্তের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন একাধিকবার চিকিৎসক পদায়নের আবেদন করেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।

জানা গেছে, একটি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ২৪৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত বৃহত্তর এই উপজেলায় ২০১১ জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। সেই অনুয়ায়ী ৪ লাখ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক বরাদ্দ রয়েছেন মাত্র ৩৪ জন।

উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ১৫টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন কনসালটেন্টের পদ খালি এবং ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার পদ শূন্য রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার ৩ জন মেডিকেল অফিসার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন।

সরজমিনে উপজেলার ঝাপা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা দিলরুবা ইয়াসমিন অফিসে ডিউটি করছেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই বছর আগে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ছিলেন। এ অঞ্চলে অনেক মানুষ মনিরামপুর যশোর না গিয়ে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা পেত। কিন্তু সেই এমবিবিএস চিকিৎসকের পদন্নোতি ও আরেক জায়গায় বদলি হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এ অঞ্চলের রোগীদের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা যশোরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত কোনো অভিযোগ নেই, তবে জনগণের স্বার্থে এখানে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক পদায়নের দাবি জানাচ্ছি। এখানে গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা দেওয়া হয়, এছাড়া কাটাছেঁড়া রোগীও এখানে আসে। মাসে ১-২টা ডেলিভারি করানো হয়। প্রতি মাসে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ রোগী এখান থেকে সেবা নেয়। 

মালিহা বেগম নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, আমদের এখান থেকে মনিরামপুর যেমন দূর, যশোরও তেমন দূর। আগে আমরা এখানে বড় ডাক্তার দেখাতে পারতাম, এখন ডাক্তার নেই। বাড়ির বয়স্কদের দূরে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে হয়।

এদিকে একই অবস্থা নেহালপুর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নেই মেডিকেল অফিসার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা। ওই ইউনিয়নের বয়স্ক ও গর্ভবতী রোগীরা উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেখানে ওষুধ নিতে আসা ভ্যানচালক আফসার মন্ডল বলেন, আমাদের এখানে বড় ডাক্তার থাকলে ভালো হয়। উপজেলা সরকারি হাসপাতালে গেলেও সিরিয়াল দিয়ে অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, সেখানেও চিকিৎসক কম।

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলে মোট ১৫টি চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে তিনজন যশোর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত। মোট ৩৪ জন চিকিৎসক রয়েছে গোটা উপজেলায়। 

তিনি বলেন, আমরা একাধিকবার চিকিৎসক পদায়ন চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো পদায়ন হয়নি। হয়তো বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ হলে এ সংকট দূর হবে।

আরকে