সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা নবম দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রংপুর থেকে ট্রেন ও আন্তঃজেলার বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রী সংকটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশালসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে তেমনটা দেখা যায়নি। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলারসহ হালকা যানবাহন চলাচল বেড়েছে।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল, বিআরটিসি বাস ডিপোসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ বাস বন্ধ রয়েছে। স্ট্যান্ডগুলোতে চালক-হেলপারসহ শ্রমিকরা থাকলেও প্রত্যাশানুযায়ী মিলছে না যাত্রীর দেখা। কাউন্টার খোলা রেখে অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

এদিকে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা বলছেন, যাত্রী বাড়লে বাস চলাচল করছে। এই কারণে কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু অবরোধের কারণে যাত্রীরা তেমন ভিড় করছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শহরের সব দোকানপাট স্বাভাবিকভাবে খুলেছে। মহাসড়কে‌ দূরপাল্লার দু-একটা বাস ছেড়ে গেলেও পণ্যবাহী ট্রাক, অটোরিকশা, সিএনজি ও ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

রংপুর কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা রুটের বাস চলাচল করলেও তা সংখ্যায় খুব কম। তবে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে হালকা যানবাহনের চাপ রয়েছে। যাত্রীরা ঝুঁকি এড়াতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ প্রাইভেট কারে করে গন্তব্যে ছুটছেন। আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধের তেমন প্রভাব না পড়লেও রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচলের সুনশান নীরব দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশন সুপার শংকর গাঙ্গুলী ঢাকা পোস্টকে ব‌লেন, সকাল থে‌কে স‌ঠিক সম‌য়ে প্রতিটি ট্রেন রংপুর স্টেশন ছে‌ড়ে গে‌ছে। এ সময় যাত্রী‌দের কোনো প্রকার সমস্যা হয়‌নি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে টানা নবম দফায় ডাকা অবরোধে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। সকাল থেকে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। দলীয় কার্যালয়সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল তৎপরতা।

অন্যদিকে সকালে নগরীর কেরানিপাড়ায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা থেকে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করাসহ দলের সকল আটক নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। মিছিলে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু নেতৃত্ব দেন।

এ ছাড়া নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। এতে রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।

এদিকে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও শহর ও মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ