৩ বার ক্ষমতার বাইরে কাজী জাফরউল্যাহ, তবুও সম্পদ বেড়েছে তার
ফরিদপুর ৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহ
ফরিদপুর-৪(ভাঙ্গা,সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা) আসনে ২০০১ সালে মাত্র একবার সংসদ সদস্য ছিলেন কাজী জাফরউল্যাহ। এরপর ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সনের কাছে হেরে যান। আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতাকালে ক্ষমতার বাইরে থাকলেও নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদ বেড়েছে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্যাহর।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তার হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখিত টাকা থেকে এবার বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া থেকে আয় বেড়েছে কাজী জাফরউল্যাহর। ২০১৮ সালে এ খাতে তার বার্ষিক আয় ছিল ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৫ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৪ টাকা হয়েছে।
কাজী জাফরউল্যাহর নামে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের পরিমান বর্তমানে রয়েছে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার ৩১৪ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯১ টাকা।
বিজ্ঞাপন
অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত খাতে তার অর্থ বেড়েছে ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৬ হাজার ৩১৪ টাকা।
চাকুরি খাতে পাঁচ বছরের ব্যবধানে কাজী জ্যাফর উল্যাহর আয় অপরিবর্তিত রয়েছে ১২ লাখ টাকা।
এছাড়া বর্তমানে তার হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৮ টাকা এবং স্ত্রী নিলুফার জাফরউল্যাহর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৬ লাখ ৭ হাজার ২২৭ টাকা। পাঁচ বছর আগে কাজী জাফর উল্যাহর নগদ টাকা ছিল ৯৩ হাজার ৯২১ টাকা এবং স্ত্রীর হাতে ছিল ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৭ টাকা।
সুতরাং হলফনামার তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে নিলুফারের হাতে নগদ কমেছে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ২১০ টাকা।কাজী জাফরউল্যাহর বেড়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩১৭ টাকা।
কাজী জাফরউল্যাহর বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ২১ লাখ ২৯ হাজার ৩৪ টাকা এবং স্ত্রীর ৮৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ টাকা। পাঁচ বছর আগে কাজী জাফর উল্যাহর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল মাত্র ছিল ২ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং নিলুফার জাফরউল্যাহর ছিল ৫০ লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ টাকা।গত পাঁচ বছরের ব্যাবধানে কাজী জাফরউল্যাহর প্রায় ১৯ লাখ টাকার ও নিলুফারের প্রায় ৩৪ লাখ টাকার ব্যাংক জমা বেড়েছে।
বন্ড ঋণপত্র স্টকএক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়টি কোম্পানীর শেয়ারের পরিমান বর্তমানে কাজী জাফর উল্যার ১ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৬৭০ টাকা এবং নিলুফারের নামে ১৩ কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৬০ টাকা। পাঁচ বছর আগে কাজী জাফর উল্যাহর ছিল ১০ কোটি ৪ লাখ ৭৮ হাজার এবং স্ত্রীর ছিল ৫ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার ২০০ টাকা।পাঁচ বছরের ব্যাবধানে এই খাতে তার স্ত্রী নিলুফার জাফরউল্যাহর প্রায় ৮ কোটি টাকার শেয়ার বেড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় কাজী জাফরউল্যাহর পোষ্টাল, সেভিংসসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রের স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের মধ্যে এফডিআর ৭ কোটি,সঞ্চয়পত্র ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর ১ কোটি ৩৫ লাখ এফডিআর ও ৮০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। পাঁচ বছর আগে কাজী জাফর উল্যাহর ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১ টাকা (এফডিআর ও ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং স্ত্রীর নামে এফডিআর ১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৪৯ হাজার ১১৮ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ৭৫ লাখ টাকা ছিল।
হলফনামায় নিজের ও স্ত্রীর গাড়ির হিসাব দিয়েছেন জাফরউল্যাহ। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দম্পতির দু’টি গাড়ি আছে। জাফরউল্যাহ নিজে যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, সেটি মূল্য ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫১১ টাকা এবং তার স্ত্রী নিলুফারের ব্যবহার করা গাড়িটির মূল্য ৫৮ লাখ টাকা।
নিজের একটি গাড়ী বাবদ বর্তমানে কাজী জাফরউল্যাহ দেখিয়েছেন ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫১১ টাকা এবং স্ত্রীর ৫৮ লাখ টাকা এটি আগের বছরের হিসেবে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সোনা ও মূল্যবান ধাতু কাজী জাফর উল্যার বর্তমানে ২ লাখ এবং নিলুফারের ৭ লাখ ৩১ হাজার যা আগের হিসেবে অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে,ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রি,আসবাবপত্র এবং পিস্তল,বন্দুক এবং নিলুফারের নামে নিবন্ধিত পিস্তল ও শটগান বাবদ দেখানো টাকার পরিমাণ।
জাফরউল্যাহর নামে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে শ্রীপুর,ফরিদপুর ও বাঁশবাড়িয়ায় ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৭ টাকার অকৃষি জমি রয়েছে। গত ৫ বছরে কাজী জাফর উল্যার নামে জমির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকলেও স্ত্রীর নামে অকৃষি জমির পরিমান বেড়েছে ১৫ লাখ ৫ হাজার ৫৮৯ টাকার।
এছাড়া কাজী জাফরউল্যাহর নামে মিরপুরে তিনটি ও ধানমণ্ডিতে একটিসহ মোট চারটি বানিজ্যিক ভবনের দাম দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৮। সেই সঙ্গে ঢাকার পান্থপথ ও গুলশানে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ দেখানো হয়েছে ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৮।
এদিকে কাজী জাফরউল্যাহর নামে কনফিডেন্ট সিমেন্ট লিমিটেড,হংকং সাংহাই মানজালা টেক্সটাইল লিমিটেড,সিবিএম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও নিরাপত্তা জামানত বাবদ দায় দেখানো হয়েছে ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ২২ টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি মিলিয়ে মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৬২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯ টাকার। অর্থাৎ দায় বাদ দিয়ে কাজী জাফর উল্যাহ বর্তমানে ৬১ কোটি ৬১ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৭ টাকার সম্পত্তির মালিক।
২০১৮ সালের হলফনামায় কাজী জাফরউল্যাহর নামে দুর্নীতি দমন আইনের ২০০৪ এর ২৬ ধারায় একটি,একই আইনের ২০০৭ এর ১৫ ধারায় একটি এবং ২০০২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলার তথ্য দেওয়া হয়। তবে এবারের হলফনামায় কোনও মামলার তথ্য দেওয়া নেই।
উল্লেখ্য, ফরিদপুর-৪ আসনে সাতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে আয়কর বিবরণীর তথ্য না দেওয়ায় জাতীয় পার্টির মো. আনোয়ার হোসেনের প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ আসনের বৈধ প্রার্থীরা হলেন- কাজী জাফরউল্ল্যাহ (আওয়ামী লীগ), মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী (স্বতন্ত্র), মাকসুদ আহমেদ (তরিকত ফেডারেশন), মো.রবিউল ইসলাম (জাকের পার্টি), মো. আলমগীর কবির (সুপ্রিম পার্টি) ও নাজমুন নাহার (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।
এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান নিক্সনের কাছে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফরউল্ল্যাহ।২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজের নামে মানিলন্ডারিং মামলা থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি কাজী জাফরউল্যাহ। ওই নির্বাচনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাফরউল্যাহর স্ত্রী নিলুফার জাফরউল্যাহ।
প্রতিনিধি/ এসএমডব্লিউ