বহিরাগতদের দাপটে রংপুরে কোণঠাসা তৃণমূলের নেতৃত্ব
অতীতের ন্যায় এবারও ‘বহিরাগত’দের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন উত্তর জনপদের বিভাগীয় জেলা রংপুরের তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতারা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৪৬ প্রার্থীর বড় অংশই বহিরাগত। আর তাদের মধ্যে অন্তত সাতজন রয়েছেন ‘হেভিওয়েটের তালিকায়’। এসব প্রার্থীর অনেকেরই নেই স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে তেমন কোনো সম্পৃক্ততা। নানা বিবেচনায় দল মনোনীত আসনের সঙ্গে নেই নাড়ির সম্পর্কও। তবে নিজেদের ‘বহিরাগত’ মানতে নারাজ এসব প্রার্থী।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে, আলো ঝলমলে শহর কিংবা মরা তিস্তার চর সর্বত্র বইছে নির্বাচনী হাওয়া। শীতের তীব্রতা ম্লান হচ্ছে ভোটের ডামাডোলে। শিশির ভেজা সকাল থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা মাঝরাত অবধি চলা দলীয় তৃণমূলের কর্মী, সমর্থক আর সাধারণ ভোটারদের আলোচনা-আড্ডায় সব ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে ‘বহিরাগতদের দাপট’ ইস্যু। এ নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও। মিছিল-স্লোগানেও ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে নানা তির্যক ‘অভিধা’।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় জেলার ৬টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রংপুর-১ আসনে। এ আসনটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থিত অপর দল জাতীয় পার্টির দুজনসহ মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, এনপিপি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী ছাড়াও রয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। আসনটিতে মোট ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩২ হাজার ৪৬ জন।
এ ছাড়া রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ব্যবসায়ী নেতা ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ৪ জন ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়ে মাঠে রয়েছেন। অন্য তিনটি আসনেও এ ধারার তেমন ব্যত্যয় ঘটেনি।
বিজ্ঞাপন
জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার রংপুর-১ (গংগাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮নং ওয়ার্ড) আসন সীমানার বাইরে থেকে এসে ৫ জন এ এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামাতে দেওয়া ঠিকানাও তাদের আসন সীমার মধ্যে পড়ে না। এ তালিকায় তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত প্রার্থী রয়েছে।
এদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ তার আসন সীমার মধ্যে ঠিকানা ব্যবহার করলেও রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় তার বাসা রয়েছে বলে জানা গেছে। দলে রওশন এরশাদপন্থি হিসেবে চিহ্নিত রাঙ্গাঁ হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এবার এ আসনটিতে ১০ বছর পর লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন।
অতীতের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, তৃতীয় থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঝে পঞ্চম ছাড়া সবকটিতেই রংপুর-১ আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক বেশি। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদও সংসদে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
স্বাধীনতার পর শুধু ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি পায় আওয়ামী লীগ। আসনটিতে রেজাউল করিম রাজু এবার ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু এবং লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার মঞ্জুম আলী।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় এলাকার ভোটাররা বলছেন, ‘এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নেন এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। অতীতে অন্য এলাকা থেকে আসা প্রার্থী এমপি হওয়ায় আমরা দুঃখ-দুর্দশায় তাদের কখনো পাশে পাইনি। কাছে যেতে পারিনি, কথা বলারও সুযোগ পাইনি।’
তাদের মতে, আসনটিতে দুই বড় দল অনেক আগে থেকেই ভোটারদের পছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে বহিরাগতদের চাপিয়ে দিয়ে আসছে। এলাকার সহজ-সরল জনগোষ্ঠী অনেকটা নিরুপায় হয়ে ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতীকে ভোট দিয়ে আসছেন। ফলে ন্যূনতম প্রত্যাশা পূরণের পরিবর্তে বড় ধরনের বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। বারবার একই চর্চার কারণে তৃণমূলের মানুষ নিয়ে রাজনীতি করা নেতারা বহিরাগতদের চাপে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছেন বলেও তাদের কণ্ঠে এমন অভিযোগ শোনা গেছে।
গংগাচড়া উপজেলা চত্বরে কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। এই ভোটার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখানে স্থানীয় লোকের এমপি হওয়ার সুযোগ হয়নি। গংগাচড়ার মানুষ যুগের পর যুগ বহিরাগত দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। বড় দলগুলোর কাছ থেকে আমরা বারবার স্থানীয় প্রার্থী চেয়েছি কিন্তু পাইনি। এবার জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। স্থানীয় প্রার্থীকেই জয়ী করবেন। স্থানীয় প্রার্থী না থাকায় এখানকার রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল রয়েছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্ব তৈরিও হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গংগাচড়া আসনটিতে গত ৩৭ বছরে স্থানীয় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেনি। গংগাচড়ার মানুষ অনেক অবহেলিত। স্থানীয় একজন এমপি হলে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারবে। অতীতে বহিরাগত প্রার্থীদের কারণে তৃণমূলে স্থানীয় প্রার্থী ছিল না। এবার অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করছে। তাদের মধ্যে স্থানীয় প্রার্থীও আছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সালের ভোটযুদ্ধে এই আসনটি বরাবরই জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। রংপুর-১ আসনে ১৯৯১ সালে এরশাদের লাঙ্গল কাঁধে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন হারাগাছ থেকে আসা করিম উদ্দিন ভরসা, ১৯৯৬ সালে রংপুর শহর থেকে আসা সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু, ২০০১ সালে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, ২০০৮ সালে এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এ এলাকার এমপি নির্বাচিত হন।
রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে আগের মতো এবারও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে তার বিপক্ষে ভোট লড়াইয়ে নেমেছেন সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল। ‘স্থানীয় ও বহিরাগত’ শব্দ বিচ্ছুরণে এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে এলাকায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তুমুল বির্তক রয়েছে। আসনটিতে আরও প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র হাকিবুর রহমান মাস্টার (স্বতন্ত্র) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সিরাজুল ইসলাম।
মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’ তকমা লাগালেও তিনি বেঙ্গলের বিরুদ্ধে ছুড়ে দিয়েছেন রাজনীতিতে ‘অস্থির ও পল্টিবাজ’ এর বিশেষণ। নৌকার প্রার্থী টিপু মুনশির মতে, ‘বেঙ্গল সকাল-বিকাল দল বদলান। একবার আওয়ামী লীগ তো আরেকবার জাতীয় পার্টি।’
বেঙ্গলের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট বহিরাগত ইস্যুতে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টিপু মুনশির জন্ম গোপালগঞ্জে। বাবার চাকরি সূত্রে রংপুরে এলেও ব্যবসা করেছেন ঢাকায়। ঢাকাতেই গার্মেন্টস নেতা ছিলেন। রংপুরের রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে এবারের নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের ধারাবাহিকতায় এবারও আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বহিরাগতের স্পষ্ট অভিযোগ। যদিও এবার তিনি হলফনামায় পীরগঞ্জের ফতেপুর জয়সনদের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার ঠিকানায় লেখা ছিল ঢাকার ধানমন্ডি।
এ আসনটিতে আরও প্রার্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম মিয়া, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হুমায়ুন ইজাজ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জাকারিয়া হোসেন ও জাকের পার্টির বেদারুল ইসলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সিরাজুল ইসলাম।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বহিরাগতদের দিয়ে পীরগঞ্জের স্থানীয় নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। যার কারণে অনেক দলের স্থানীয় নেতৃত্ব হোঁচট খাচ্ছে। এ এলাকার জনগণ নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারছে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির থেকে আমরা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছি।
এ আসনের তরুণ ভোটার শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কোনো বিবেচনায় আমরা এলাকার প্রার্থী চেয়েছি। প্রথম প্রত্যাশা ছিল এলাকার পুত্রবধূ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হোক। অন্যথায় এলাকার সন্তান হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়। এ দুইজনের কেউ না হলে অবশ্য এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো নেতা মনোনয়ন পাবেন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এবারের চূড়ান্ত মনোনয়নেও এলাকাবাসীর প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি।
হলফনামায় থাকা ঠিকানার তথ্য বলছে, রংপুর-৩ আসনেও (রংপুর সদর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা) সংসদীয় আসন সীমার বাইরে থেকে আসা প্রার্থী রয়েছে ৩ জন এবং রংপুর-৫ আসনে (মিঠাপুকুর) রয়েছে একজন। যদিও প্রার্থীদের অনেকেই নিজেদের ‘বহিরাগত’ নামতে চাইছেন না। বরং কেউ কেউ বাপ-দাদার বসবাস, কেউবা জন্মসূত্রে নিজেদের স্থানীয় দাবি করছেন।
রংপুর জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসদ নির্বাচনে বহিরাগত প্রার্থী দেওয়াটা শুরু হয়েছিল এরশাদের শাসনামলে। অতীতে মুন্সিগঞ্জ থেকে এসে শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন, চাঁদপুর থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী রংপুরের এই আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় গিয়ে প্রার্থী হয়ে জয়ী হওয়ার রেকর্ডও কম নয়। সেই ধারাবাহিকতা দিনে দিনে বিভিন্ন দলের মধ্যে আরও শক্ত পোক্ত হচ্ছে। ফলে বহিরাগত প্রার্থীদের কারণে স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। রাজনীতিতে স্থানীয়দের সঠিকভাবে মূল্যায়নও হচ্ছে না।
অন্যদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলছেন, প্রতীকের পাশাপাশি ভোটের মাঠে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে স্থানীয় প্রার্থীর ইস্যুটি। উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথা ভাবছে ভোটাররা। বিগত সময়ে যাদের ভূমিকা জনগণকে নিয়েই ছিল তাদের দিকেই এবার একটা ঝোঁক রয়েছে।
রংপুরের ইতিহাস গবেষক, সংরক্ষক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিয়াদ আনোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ সারা বছর যাকে এলাকার নেতা হিসেবে দেখেন, তাকেই সংসদে দেখতে চান। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেক সময় বাইরে থেকে আসা প্রার্থীরা রংপুরের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এবারও রংপুরে এমন প্রার্থী রয়েছে। এতে দল হয়ত নির্বাচনী কৌশলী জিতে যায় বা যাবে কিন্তু স্থানীয় রাজনীতি এখানে হেরে যাচ্ছে। স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশ হচ্ছে না। তৃণমূলে অনেক মেধাবী, শিক্ষিত মানুষজন রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী। কিন্তু বহিরাগতদের আধিক্য তাদের আগ্রহকে দমিয়ে রাখছে। এতে তৃণমূল থেকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি না হওয়ায় হতাশার সঙ্গে রাজনীতিবিমুখ নেতাকর্মীও বাড়ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রংপুর জেলার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীতে স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব সংকট তৈরি হবে। কারণ বহিরাগতরা নির্বাচিত হওয়ার পর তার বলয়ের বাইরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা যেতে পারে না। এতে যেমন স্থানীয় রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় এমপি না থাকার কারণে তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী তখন নিজেদেরকে এমপি ভাবতে শুরু করেন। স্থানীয় সমস্যা, সম্ভাবনা ও উন্নয়ন স্থানীয় প্রার্থী বা জনপ্রতিনিধি ছাড়া বাইরে থেকে লোকেরা খুব বেশি অনুধাবন করতে পারেন না। এ কারণে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রংপুর এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও লেখক ড. তুহিন ওয়াদুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের মাটির সম্পর্ক নেই, তারা এখানকার মানুষের চাওয়া-পাওয়াটা বুঝবে না। এলাকার বৈষম্য দূরীকরণে তারা ভূমিকা রাখতে পারে না। হয়ত উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু রাজনীতির জন্য যে মাপের নেতাকর্মী তৈরি করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে না। যারা তৃণমূলের রাজনীতিকে আগলে রাখছেন, তারাও একটা সময় হতাশ হচ্ছেন। কেউ কেউ রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন। একা ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়। নব্বই দশকের পর থেকে তৃণমূলে নেতৃত্ব বিকাশের সংকট যেভাবে ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিচ্ছে, তার নেপথ্যে বাইরে থেকে আসা জনপ্রতিনিধিদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে।
এমজেইউ