দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসন থেকে ১০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুইজন, জাকের পার্টির চারজন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের একজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনজন রয়েছেন।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় রংপুরের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন- রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সবুজ মিয়া ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মঞ্জুম আলী।

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমনা আক্তার লিলি ও জাকের পার্টির আশরাফ উজ জামান, রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তুষার কান্তি মণ্ডল ও জাকের পার্টির লায়লা আঞ্জুমান আরা বেগম। এ ছাড়া রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হাকিবুর রহমান মাস্টার, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে জাকের পার্টির শামীম মিয়া এবং রংপুর-৬ আসনে (পীরগঞ্জ) জাকের পার্টির প্রার্থী বেদারুল ইসলাম।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ১০ জনের মনোনয়ন বাতিল এবং ৩৯ জনের বৈধ হয়। নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পায় আরও সাতজন। আজ রোববার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে ছয়টি আসনে ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজনসহ মোট ৩৬ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়াই করবেন। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ হবে।

এদিকে রংপুর-১ আসনে ১২ জন মনোনয়ন জমা করলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র আসাদুজ্জামান বাবলু, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন, তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীনুর আলম।

রংপুর-২ আসনে মনোনয়ন জমা করেছিল ছয়জন। এখন ভোটযুদ্ধে থাকছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কামাল মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মণ্ডল।

রংপুর-৩ আসনে নয়জন মনোনয়ন জমা করেন। এ আসনে এখন ভোটের মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহিদুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম এবং তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী।

রংপুর-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সিরাজুল ইসলাম নির্বাচন করবেন। এ আসনে চারজন মনোনয়নপত্র জমা করেছিলেন।

রংপুর-৫ আসনে নয়জন মনোনয়ন ফরম জমা করেছিলেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমান, জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুবুর রহমান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল হালিম মণ্ডল, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত এনামুল হক, সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের (বিএনএফ) আব্দুল বাতেন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন।

এ ছাড়া রংপুর-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম যাদু মিয়া, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হুমায়ুন ইজাজ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জাকারিয়া হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুল আলম, আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী ভোটযুদ্ধে লড়বেন। এ আসনে নয়জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছিলেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।  

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ